গাজীপুর থেকে ফিরে: গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সড়ক ভবনের পথে হেঁটে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার সামনে-পেছনে ছুটছেন শত শত মানুষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলীকে মন্ত্রী বললেন, ‘এ রাস্তা ঠিক করো। ’
এরপর মন্ত্রী সড়ক ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলেও বাইরে তখনো মানুষের জটলা। ভিড়ের মধ্যে একজন জসিম উদ্দিন। বয়স পয়ত্রিশের কোটায়। বাড়ি জেলার জুলার পাড় এলাকায়।
ভিড় করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর কথা হুইন্না তারে দেখতে আইছি। দেশের জন্য তিনি ভাল কাজ করছেন। বাসের সুপার ভাইজাররা যাত্রীর কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করলে মন্ত্রী যাত্রীদের অভিযোগ শুনেন। এটা তো বিরল ঘটনা। এসব কারণেই মন্ত্রী স্যার একাই একশ। ’
বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে জসিমের সঙ্গে কথার সময়েই তার উচ্চারণের সঙ্গে কন্ঠ মেলালেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ী সেলিম, ‘এক লোক বললো, সড়ক ভবনে মন্ত্রী আইছে। এই কথা শুইন্ন্যা আর থাকতে পারলাম না। দোকান ফেলে স্যারকে দেখতে আইছি। স্যারের মতো দশটা মন্ত্রী পাবলিকের লেইগ্যা আন্তরিক হলে দেশটাই বদলাইয়া যাইতো। ‘
গাজীপুর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। কাঁধে ব্যাগ। পথে মন্ত্রীকে দেখে তার সামনে পথ চলতে চলতে সুযোগে সেলফি তুলে নিলেন। কৌতুহলী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘মন্ত্রীদের রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায় না। পাবলিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন না। কিন্তু এ মন্ত্রী ব্যতিক্রম। তার পারফরম্যান্সে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। মন্ত্রীত্বকে তিনি জনস্বার্থেই নিবেদন করেছেন। ’
বাংলাদেশ সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের (বিএসপি) মহাসচিব ও প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের অন্য মন্ত্রীদের একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। মন্ত্রীত্ব কাকে বলে, কীভাবে করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। ’
এদিকে, গাজীপুরের সড়ক ভবনের ভেতরে বসেই মন্ত্রী আবারো ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুরনো মাইক্রোবাস কেটে লেগুনা তৈরির বিষয়ে। এ সময় সেখানে দাঁড়ানো বিআরটিএর এক কর্মকর্তাকে মন্ত্রী বলেন, ‘তুমি বিআরটিএর এডি, শুধু বেতন খাচ্ছ। ভাগ বসাচ্ছো। তুমি আমাকে এসব বিষয়ে কিছুই জানাওনি। অন্যের কাছ থেকে শুনে এখানে এসেছি। এখানে প্রশাসনের সবাই আছে, কথা বলে ব্যবস্থা নাও। ’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরকেও ছাড় দেননি ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন ‘জাহাঙ্গীর কোনদিন বল নাই, তোমার এখানে অবৈধ লেগুনা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা দখল হচ্ছে। এটা কী তোমার দায়িত্ব না? এখানকার মানুষ খারাপ থাকলে ভোটের সময় ভোট পাবে না। মানুষ দেখছে, সময়মতো শাস্তি দিয়ে দেবে। ’
সড়ক ভবনের প্রকৌশলীদেরও একহাত নেন মন্ত্রী। তাদের বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করছি। রাস্তা দখল হচ্ছে, বল নাই কেন?’
সাধারণ মানুষের মতে অতীতে মন্ত্রীরা থাকতেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। আর এ মন্ত্রীর ঘাম ঝড়ে একদিন-প্রতিদিন সড়কে। তিনি যা বিশ্বাস করেন সেটাই করেন। ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ভোগ কমাতে ইতোমধ্যে তিনি সফল হয়েছেন। এ মহাসড়কসহ গুরুত্বপুর্ণ মহাসড়কে তিনি থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বিশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এর ফলে অনেকটাই কমেছে সড়ক দুর্ঘটনা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এসআর
** অবৈধ কারখানায় সড়কমন্ত্রীর হানা