ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেবো না’

মহিউদ্দিন মাহমুদ ও ফজলে ইলাহী স্বপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
‘জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেবো না’ বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কুড়িগ্রাম থেকে: দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।

কখনোই এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেবো না। ’

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকসেবন বরদাশত করা হবে না। আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই কঠোর অবস্থান নিয়েছি। কখনোই এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেব না। ’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী দেশে থাকতে আন্দোলনের নামে মানুষ মেরেছেন। আর এখন তিনি বিদেশে গেছেন। বিদেশের মাটিতে বসে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন। বিদেশের মানুষ যারা এখানে, তাদেরকে হত্যা করে এদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছেন। ’

বিএনপি-জামায়াতকে জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে নির্বাচনের সময় থেকে শত শত মানুষ ওই বিএনপি-জামায়াত জোট পুড়িয়ে মেরেছে। দুই হাজারের বেশি বাস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে, প্রাইভেটকার পুড়িয়ে দিয়েছে। বাসে মানুষ পুড়িয়ে দিয়েছে। ’

‘ওরা মানুষ না, ওরা জানোয়ার। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, মানুষের ক্ষতি করে, তারা মানুষের কল্যাণ আনতে পারে না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেড়শ’র বেশি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। এখনও অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাসের ড্রাইভার, শিশু, কলেজের ছাত্রী কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ’

এসময় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বরণের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, কোনো সরকারই স্থল সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রসীমা সমস্যা, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করতে পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এসব সমস্যার সমাধান করেছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগ সরকার এখানকার বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছে। ’

‘এখন থেকে আর ছিটমহল বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা তাদের আপন করে নেবেন। তারা আমাদের আপনজন। ’

জনসভায় যোগ দেওয়া কুড়িগ্রামবাসীকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কাছে দাবি-দাওয়ার প্রয়োজন নেই। উন্নয়নের জন্য কী করতে হবে, তা আওয়ামী লীগ ভালোভাবে জানে। আমাদের উন্নয়ন নীতিমালা আছে। আমরা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ’

তিনি কুড়িগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘এখানে যেন রেল যোগাযোগ চালু হয় সে ব্যবস্থা করে দেবো। কুড়িগ্রামে রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে এ এলাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালুর ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। ’

শিক্ষার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুড়িগ্রামে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ ও একটি স্কুল সরকারিকরণ করা হবে। ’

কুড়িগ্রামের নদী ড্রেজিং ও সেসবের নাব্যতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন প্রধানমন্ত্রী।

কুড়িগ্রামে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে যেন শিল্প, কলকারখানা গড়ে ওঠে তার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবো। যেন আপনাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। ইতোমধ্যেই আমি এখানকার ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা চিহ্নিত করার। জায়গা চিহ্নিত হলেই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে। ’

দ্বিতীয় ধরলা ব্রিজ নির্মাণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনারা জানেন, আমরা আরেকটি ধরলা ব্রিজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ধরলা ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ শুরু করে দিয়েছি। ’

শিশুদের খেলাধুলার জন্য শিশু পার্ক ও বারো মাস খেলার জন্য একটি স্টেডিয়াম বানিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কুড়িগ্রামের মানুষ মঙ্গা ভুলে যাবে। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ করা হবে। যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদের আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরবাড়ি করে দেবো।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। দেশকে ২০২১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়তে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় আমরা করবো, আওয়ামী লীগ সরকার করবে। শুধু আপনাদের দোয়া চাই। নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়েছেন, নৌকা আপনাদের মার্কা, এই নৌকা মার্কাই আপনাদের উন্নয়ন দেবে। এই নৌকা মার্কাই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তাই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। ’

বিশ্বসভায় যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গড়ে উঠবে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। ’

দুপুর থেকে হাজারো জনতা বর্ণাঢ্য মিছিল সহকারে সভাস্থলে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ২টার মধ্যে কলেজ মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনতার ঢল মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তাগুলোতে উপচে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে কুড়িগ্রামের মানুষের আগ্রহের কমতি ছিলো না। তারা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে সভায় যোগ দেন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ সভায় অংশ নেন। সভায় নারীদেরও ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো।

অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য গাছের মগডালে ওঠে পড়েন। প্রচুর ভিড় সামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে।

কলেজ মাঠে ১’শত ৩০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া দৃষ্টি নন্দন নৌকার ওপর মঞ্চ তৈরি করা হয়।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ে জনসভা মঞ্চে আসেন। মঞ্চে ওঠার পর হাজারো জনতা তাকে স্বাগত জানায়।

সভাস্থলে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ১৬টি কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডলের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫/আপডেট ২০১১ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/


** ‘নৌকা মার্কাই আপনাদের উন্নয়ন দেবে’
** ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান হয়েছে
** নতুন নাগরিকদের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন করবো
** আপনারা এখন নাগরিক, একেকজন একেকটি ফুল
** বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো নীলফামারীর বিলুপ্ত ৪ ছিটমহল
*
* দাসিয়ারছড়ায় প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।