লালমনিরহাট: সদ্যবিলুপ্ত লালমনিরহাটের ৫৯টি ছিটমহলে ভূমির মালিকানা বন্টনের কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দিনভর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উওর গোতামারী ছিটমহলে ভূমি জরিপ করেন উপজেলা ভূমি কমিশনার আজিজুর রহমান ও কানুনগোর খাদেমুল ইসলাম।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পুরনো নথিপত্র বিশ্লেষণ এবং দখলের ভিত্তিতে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ছিটমহলের ভূমি জরিপ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে লালমনিরহাট প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন যেসব উপজেলার অভ্যন্তরে বিলুপ্ত ছিটমহল রয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার কানুনগোকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ সব কমিটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলায় দুটি, হাতীবান্ধা উপজেলায় দুটি ও পাটগ্রাম উপজেলায় ৫৫টি ছিটমহল রয়েছে।
১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমি জরিপের এ কার্যক্রম চলবে। একই সময়ের মধ্যে লালমনিরহাটের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর অভ্যন্তরে সদ্যবিলুপ্ত ভূমি জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ভারতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ৩১ জুলাই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। গত ৬৮ বছরে ছিটমহলের কোনো ভূমি ব্যবস্থাপনা ছিল না। সাদা কাগজের দলিলেই জমি কেনাবেচা করা হতো। অনেকের জমির কাগজপত্র ভারতের কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে আছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে থাকা অনেক নথিপত্রই তারা পেয়েছেন। উভয় দেশের ছিটমহলের আগের আমলের কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে।
সাবেক ছিটমহলের ভূমি জরিপকালে এসব নথিপত্রের সঙ্গে প্রধানত দখলের ভিত্তিতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনটি কমিটি কাজ করবে। ভূমি জরিপের সময় কেউ আপত্তি তুললে ইউএনওর নেতৃত্বে জরিপ পরিচালনা কমিটি তা সমাধান করার চেষ্টা করবে। সেখানে সমাধান না হলে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সমাধান করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভূমি জরিপের জন্য গঠিত কমিটি বিলুপ্ত ছিটমহলে সরেজমিনে কলমি নকশা তৈরি এবং রেকর্ড অব রাইটস ফরমে দখলের ভিত্তিতে ভূমি মালিকানার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। ফরমে চৌহদ্দি বর্ণনা করে সংশ্লিষ্ট চৌহদ্দিভুক্ত ভূমি মালিকদের সই নেওয়া হবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ডিসি-ডিএম সম্মেলনে উভয় দেশের ছিটমহলের আগেকার আমলের বেশ কিছু নথিপত্র বিনিময় করা হয়েছে। যদি কেউ আপত্তি উত্থাপন করে থাকে তাহলে সেগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এসএইচ