ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঠাকুর দা’র তিথি রক্ষার্থে প্রতিমাশিল্পী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
ঠাকুর দা’র তিথি রক্ষার্থে প্রতিমাশিল্পী ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আর দু’দিন পরই শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই মন্দির মন্দিরে চলছে ঠাকুর সাজানোর কাজ।

প্রতিমাশিল্পীরা শেষ মুহূর্তে তুলির ছোঁয়ায় আকর্ষণীয় করে তুলছেন ঠাকুরকে।

শুক্রবার (১৬ অকটোবর) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর শাঁখারী বাজার নর্থ ব্রুক রোডের ফরিদাবাদ পুলিশ ফাঁড়ি মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমাশিল্পী গোবিন্দ পাল ও তার সহকর্মী পলান পাল আপন মনে তুলি দিয়ে দুর্গা মা’কে সাজাচ্ছেন।
 
গোবিন্দ পাল কাজ করেন শিমুলিয়া শিল্পালয়ে। তার ওস্তাদ মৃৎ শিল্পী বলাই পাল। গোবিন্দ ৮ বছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে রাজধানীর শাঁখারী বাজারে বলাই পালের কাছে এসে কাজ শুরু করেন। এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঠাকুর বানানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

গোবিন্দ পাল বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতেই চট্টগ্রাম থেকে আসছি। সারাদিন চট্টগ্রামে কাজ করে ঢাকায় আসছি। এর আগে রংপুরে কয়েকটি মন্দিরে কাজ করে আসছি। সারা বছরই দেশের কোথাও না কোথাও বায়না (অর্ডার) থাকে।

কিভাবে এ পেশায় এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু পাল বংশের ছেলে, তাই ছোট থেকেই ঠাকুর দা’কে দেখতাম, কিভাবে ঠাকুর বানায়। সেই থেকেই সখ, একদিন এই কাজ করবো। বলতে পারেন, ঠাকুর দা’র তিথি রক্ষা করতেই এই পেশায়। তবে সখ করে এসে, এখন দেখছি পেশায় থাকাই কষ্টকর।
 
তিনি আরও বলেন, প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। এই দিয়ে বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্রকে দিতে হয়। শুধু থাকা-খাওয়া মালিকের হওয়ায় একটু বেঁচে আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে এই পেশায় আসছিলাম, কেন যে  এই কাজ শিখলাম?

গোবিন্দ বলেন, একটা ঠাকুর বানাতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগে। ঠাকুর বানাতে মাটির মিশ্রণই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। বেলে ও এঁটেল মাটির মিশ্রণে ঠাকুর তৈরি করা হয়। তাই মাটির সঠিক পরিমান নির্ণয় করতে না পারলে ঠাকুর টেকে না। একটা ঠাকুর ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দরে বিক্রি হয়। সারা বছর কাজ থাকলেও দুর্গা পূজার সময় কাজের চাপ একটু বেশি থাকে বলে জানান এই প্রতিমাশিল্পী।
 
ঠাকুরের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, মা দুর্গা চেনার উপায় হচ্ছে, অনেকগুলো হাত, নীচে থাকবে সিংহ, মহিষসহ আর কয়েকটি প্রতিমা। মা সরস্বতিকে চেনা যাবে হাতে বীনা ও পাশে হাঁসের চিহ্ন দেখে। মা লক্ষ্মী আসেন পেঁচায় করে। তাই তার পাশে পেঁচা থাকে। এছাড়া ময়ূর নিয়ে আসে কার্তিক এবং গনেশের পাশে থাকে ইঁদুর।

কাজ করতে করতে এক সময় এগুলোর ওপর মায়া তৈরি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, যখন পূজা শেষে পানিতে ডুবিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, তখন খারাপ লাগে। রাতদিন পরিশ্রম করে সুন্দর করে সাজাই, সেটাকেই আবার বিসর্জন দিতে হয়। এ কাজ আর ভালো লাগে না। তবে না করেও পারি না। অন্য আর কোনো কাজ তো শিখি নাই। এটা না করলে খাবো কি? ঠাকুর বানানোর কাজ কঠিন বলে বাবা করেননি। ঠাকুর দা’র তিথি রক্ষার্থে আমিই করি। তবে এখন আর এগুলো করতে ইচ্ছে করে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।