ঢাকা: ‘ভোট কারচুপির সুযোগ রেখে’ ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ নীতিমালা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পূর্ব অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না-এমন বিধান রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বিধি-নিষেধগুলো জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ভোটকক্ষে প্রবেশের পূর্বে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। সাংবাদিকদের কাছে নিজস্ব পরিচয়পত্র এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপত্র থাকতে হবে। এছাড়া তারা ভোটকক্ষে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে পারবেন না। ফলে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
এর আগে, পূর্ব অনুমতির কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় সাংবাদিক নাজেহালের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইসি এমন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তিন সিটি নির্বাচনের সময়ও এমন বিধিনিষেধ আরোপ হয়নি। তখন সাংবাদিকদের দেওয়া ইসির অনুমতি কার্ড বা পর্যবেক্ষণ কার্ডে লেখা ছিল- এই কার্ডের বাহক ভোটদানের গোপন কক্ষে প্রবেশ করবেন না। এই কার্ডের বাহক ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশ মেনে চলবেন। এই কার্ডের বাহক পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ও আচরণ বিধি মেনে চলবেন। অর্থাৎ ভোটকক্ষে প্রবেশের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পূর্ব অনুমতি প্রয়াজন ছিল না। শুধু গোপন কক্ষে ঢোকা যেতো না।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, এমন বিধানের ফলে সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। কেননা, কোনো অনিয়ম হলে অনুমতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। বিশেষ করে ফটো বা ভিডিও জার্নালিস্টরা কোনো দৃশ্যই ক্যামেরায় ধারণ করতে পারবেন না। অর্থাৎ এমন বিধানের ফলে ভোটকক্ষে কারচুপির বিষয়টি উৎসাহিত হবে।
চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রেই সাংবাদিকদের সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। ওইদিন বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্বীকারও করেন সিইসি। এছাড়া অনিয়মের কারণে বেশকিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতও করেছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ১১ মে পুনঃভোট করা হয়েছে। আগে অনুমতির বিধান না থাকার পরেও পুলিশ সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণে বাধা দিয়েছে। আর সামনের নির্বাচনে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে খোদ ইসি কর্মকর্তারাই উদ্বিগ্ন।
ইসির বর্তমান উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের বিধান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়। এতে নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ আরও বেড়ে যাবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো সাংবাদিকদের যত বেশি পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিশন যদি মনে করে আপনাদের (সাংবাদিকদের) ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে দেবে না তাহলে তো কিছু করার নেই। কিন্তু প্রবেশের ক্ষেত্রে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার বিধান নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং নির্বাচনে কারচুপিকে উৎসাহিত করবে।
তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ মনে করেন, আগেও অনুমতি নেওয়া হতো। এখনও অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে। শৃঙ্খলা আনার জন্যই এই বিধানটি। এমন বিধান যদি না রাখা হয় তবে এক সঙ্গে অনেক সাংবাদিক একটি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ফেললে সমস্যা হতে পারে। সে জন্যই ভোটকক্ষে প্রবেশে পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জন্য পূর্ব অনুমতি নেওয়ার বিধানটি আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
ইইউডি/আইএ