ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঠাকুর নরোত্তমের তিরোভাব মহোৎসব শনিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
ঠাকুর নরোত্তমের তিরোভাব মহোৎসব শনিবার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলি গৌরাঙ্গবাড়ীতে আগামী শনিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে তিন দিনব্যাপী ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব শুরু হচ্ছে।

প্রেমভক্তি মহারাজ, অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাসের স্মরণে শনিবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে।

রোববার অরুণোদয় হতে অষ্ট প্রহরব্যাপী তারক ব্রক্ষ্মনাম সংকীর্তন এবং পরদিন সোমবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল, দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে।

এদিকে, তিরোভাব তিথি মহোৎসবকে ঘিরে প্রেমতলী ও অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গৌরাঙ্গবাড়ী ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ জলপানি, ভক্তদের থাকার স্থান ও পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে তিনদিনের জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
 
ঠাকুর নরোত্তম দাসের জীবনী থেকে জানা যায়, বিশ্ব বিখ্যাত বৈষ্ণব ধর্মযাজক শ্রী চৈতন্য দেবের ভাবশিষ্য শ্রী নরোত্তম দাস ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলীর খেতুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা শ্রীকৃষ্ণ নন্দ দত্ত ছিলেন তৎকালীন গৌড় রাজ্যভুক্ত এ এলাকার ভূস্বামী। বাবার বিত্তবৈভব ফেলে তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে চলে যান ভারতের বৃন্দাবনে বৈষ্ণব ধর্মযাজক শ্রী চৈতন্য দেবের সান্নিধ্য লাভের আশায়।

বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে শ্রী নরোত্তম ফিরে আসেন নিজ গ্রাম খেতুরে। প্রয়াত সেই ধর্মযাজকের তিরোভাব স্মরণে ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজ অবধি এখানে এক মিলনমেলায় এ মহোৎসব উদযাপন হয়ে আসছে।

এ তিথিকে ঘিরে প্রেমতলী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এবারেও তিরোভাব তিথি উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে খেতুরধামে। ইতোমধ্যে দূর-দূরান্তের ও দেশ-বিদেশের ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এবারের উৎসবকে ঘিরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মহোৎসবকে ঘিরে আয়োজিত মেলাস্থলে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্ট বোর্ডের কয়েকশ’ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক।

সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব সম্পন্নের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পাদক শ্যামাপদ স্যান্যাল বাংলানিউজকে জানান, পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে। একটি মাত্র বাংলাদেশে। আর তা হচ্ছে খেতুরীধাম। এ কারণে প্রতিবছর উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা ও আসাম এবং নেপাল ও মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে।

গত বছর বৈরী আবহাওয়া ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে ভক্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হয়েছিল। কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিক-ঠাক থাকায় ভক্তের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। এসময় উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সবার সহায়তা কামনা করেন তিনি।

গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দিরের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে জানান, সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরীধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়কটিতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম ফরহাদ হোসেন খান বাংলানিউজকে জানান, খেতুরীধাম ও মেলাকে ঘিরে ওই এলাকায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে জেলা পুলিশের প্রায় ২০০ জন সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

এছাড়া প্রেমতলী বাজারে বসানো হবে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
এসএস/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।