ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ শহরের সাহেব আলী রোড এলাকার একটি ডাস্টবিন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের পেছনে এ ডাস্টবিনে একটি পলিথিনে রাখা হয়েছিল ১৭টি হাড়।
ভিড় জমে যায় ঔসুক্য মানুষের। এক কান, দু’কান করে খবর পৌঁছে পুলিশের কাছে। পুলিশ এসে উদ্ধার করে পলিথিন ভর্তি ১৭ টি হাড়। ভেস্তে যায় কঙ্কাল চোর সিন্ডিকেটের ডাস্টবিনে লুকিয়ে রেখে কঙ্কাল বিক্রির কৌশল। শনিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের সংঘবদ্ধ কঙ্কাল চোর সিন্ডিকেটই বিক্রির উদ্দেশ্যে এখানে পলিথিনে ভরে কঙ্কাল ফেলে রেখে গিয়েছিল। চলতি মাসে কঙ্কাল চোর চক্রের সদস্যদের ধরতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে পুলিশ। কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে ধরা পড়েন জাহাঙ্গীর (২৪), রমিজ (২৫) ও হারুন (৩৫)।
পুলিশের এমন হার্ডলাইনের প্রেক্ষিতে তাদের দৃষ্টি এড়াতেই পলিথিনে ভরে ডাস্টবিনে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল হাড়গোড়। পরে সুযোগ বুঝে ডাস্টবিন থেকে পলিথিন উঠিয়ে অন্যত্র চালান দেয়ার কৌশল ছিল ওই চক্রের সদস্যদের, এমনটিই মনে করে পুলিশ।
জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রিক কঙ্কাল বাণিজ্য সিন্ডিকেটের হয়ে তাদের মনোনীত চোরের দল জেলার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি করে। পরে চুরি করা কঙ্কাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কবর খুড়ে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় প্রায় সময়েই আলোচনায় আসে। উপদ্রুত এসব এলাকায় রাত জেগে মানুষ কঙ্কাল চুরি ঠেকাতে পাহারা দেয় এমন খবরও চাউর হয়ে উঠেছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগ ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের নাম করে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দু’টি চক্র রমরমা কঙ্কাল বাণিজ্য করে আসছে দিনের পর দিন।
একটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন শাকিল ও ফজলু, অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক ও নুরু। হৃদয় বিদারক, অমানবিক এ মানব কঙ্কাল চুরি ও বিক্রির ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরে করে চালাচ্ছে এসব সিন্ডিকেট।
সূত্র মতে, এ দুই সিন্ডিকেট কঙ্কাল চোরদের কাছ থেকে মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় কঙ্কাল কেনে। পরবর্তীতে হাত বদল করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মেডিকেল কলেজে এসব কঙ্কাল বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকায়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, বিক্রির উদ্দেশ্যেই কঙ্কাল চোর সিন্ডিকেট পলিথিনে ভরে ১৭টি হাড় রেখে গিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে হাড়সমূহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, কঙ্কাল চোরদের ধরতে পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরু হওয়ায় নতুন কৌশল হিসেবেই তারা ডাস্টবিনকে বেছে নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর বাংলানিউজে ‘সিন্ডিকেটে রমরমা কঙ্কাল বাণিজ্য’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
আরআই