ঠাকুরগাঁও: শীতকালীন আগাম সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক বেকার যুবকসহ বিপুল সংখ্যক কৃষক।
এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম সবজির বাম্পার ফলনও হয়েছে।
শীত আসার আগেই চাষিরা লাল শাক, পালং শাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, চিচিঙ্গা, পটল, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। ফলে এখন ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক এলাকায়ই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবজির সমারোহ।
প্রতিদিনই ভোরে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কৃষকরা নিয়ে আসছেন এসব সবজি। দামও পাচ্ছেন ভালো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজিই পরে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
সদর উপজেলার নারগুন, খোচাবাড়ী, ভাওলার হাট, শিবগঞ্জ, আউলিয়াপুর, ভুল্লী, দেবীপুর,আকচা, বেগুনবাড়ি এবং বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে চাষ হচ্ছে শীতের আগাম সবজি।
এদিকে, অল্প সময়ে সবজি চাষে লাভের সুযোগ থাকায় চাকরির পেছনে না ছুটে অনেক শিক্ষিত বেকাররা ঝুঁকে পড়ছেন সবজি চাষে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজের জমি না থাকলেও অনেকেই অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক লিজ নিয়ে সবজির আবাদ করেছেন।
তবে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলে এ জেলায় আরো বেশি মানুষকে সবজিসহ কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। তাদের চাওয়া, জেলার কৃষির উন্নয়নে তাদের সহজ শর্তে ও কম সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হোক।
সদর উপজেলার চামেশ্বরী গ্রামের উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক মেহেদী আহসান উল্লাহ। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির পেছনে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তিনি নেমেছেন কৃষিকাজে।
এবার তিনি ৭ একর জমিতে করলার আবাদ করেছেন। এতে একরপ্রতি খরচ হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এখন মণপ্রতি করলা বিক্রি করেছেন ১৮শ’ টাকা থেকে ২২শ’ টাকা দরে।
মেহেদী আহসান উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, ৭ একর জমির করলা বিক্রি করে তার লাভ হবে ৫ লাখ টাকার মতো। ফলে তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবকরা এখন সবজি চাষে নামছেন।
তিনি আরো জানান, তার উৎপাদিত করলা দুবাই, বাহরাইন, অস্ট্রেলিয়া, হংকংসহ ৭টি দেশে রফতানি হচ্ছে। নিয়মিত কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি ছাড়াও ধান, গম, আম, লিচুরও আবাদ করেন তিনি। উৎপাদনের দিক থেকে তিনি সর্বোচ্চ ফলন পাচ্ছেন। এখন জেলায় তিনি মডেল কৃষকে পরিণত হয়েছেন।
একই গ্রামের বেকার যুবক তাজুল ইসলাম জানান, ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করেছেন তিনি। ক্ষেত থেকেই বিক্রি করে পেয়েছেন ৬ লাখ টাকা। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আরো বেশি সবজির আবাদ করবেন তিনি।
বেগুনবাড়ি এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, এবার ৫ শতক জমিতে বরবটি-শিমের আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৯ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। আরো ৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করার আশা তার।
ভুল্লী এলাকার চাষি মতিউর রহমান জানান, ৮ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এবার ফলন হয়েছে ভালো। প্রতিমণ বেগুন উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৪শ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকা দরে।
রানীশংকৈল উপজেলার শালবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. সেন্টু ৩ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ফুল বড় হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তিনি ফলন বাজারে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ঢাকার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম জানান, কারওয়ানবাজারে এ জেলার সবজি বিক্রি করেন তিনি। এ জেলার সবজির মান ভালো। এবার ব্যবসায় তার ভালো লাভ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর জেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন সবজি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, জেলায় এবার শীতকালীন আগাম সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন সবজি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলার সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপনসহ কারিগরি সহায়তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এক্ষেত্রে আরো প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এসআর/এএসআর