ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘পাকিস্তান থেকে তো সাটির্ফিকেট আনতে পারলেন না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৫
‘পাকিস্তান থেকে তো সাটির্ফিকেট আনতে পারলেন না’

ঢাকা: আপনিতো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন পড়েছেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট কই? পাবলিক বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়েছেন, কিন্তু সার্টিফিকেট নেই।

একজন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী সমনের আবেদনের শুনানিতে সোমবার (০২ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা।

সাকা চৌধুরীর রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের পর গত ১৯ অক্টোবর তার পক্ষে ৫ জন পাকিস্তানিসহ আটজন সাফাই সাক্ষীর সমন চেয়ে আবেদন করা হয়।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে সাফাই সাক্ষীদের সমনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ আদালত।

আবেদনের শুনানিতে সাকা চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাক্ষী সমনের জন্য আমাদের একটা আবেদন আছে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের এফিডেভিট (সাক্ষীদের বক্তব্য) ট্রাইব্যুনালে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তো গ্রহণ করেননি।

জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, সাক্ষীদের বক্তব্য সরাসরি না হওয়ায় খারিজ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের বক্তব্য সঠিক এটা কিভাবে বুঝবো? আপনি (সাকা চৌধুরী) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময়ের (মুক্তিযুদ্ধের সময়) সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। প্রসিকিউশনের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে। এখন এ পর্যায়ে এসে আপনি বলছেন, আপনি পাকিস্তানে ছিলেন। এটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

খন্দকার মাহবুব বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না এটা কনসিডার করেন।

জবাবে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, আপনিতো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, পড়েছেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট কই? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, কিন্তু সার্টিফিকেট নেই? একজন ডিপার্টমেন্টের (বিভাগীয়) অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না।

আপনি লন্ডনে গেছেন। লিঙ্কন ইনে (ব্যারিস্টারি) ভর্তির কথা বলেছেন। কিন্তু সার্টিফিকেট কই? এতো কাগজ দিলেন, পাকিস্তান থেকে সার্টিফিকেট আনতে পারলেন না।   আপনি লন্ডন, পাকিস্তান, ওয়াশিংটনে গেছেন। হাউ ফানি, সার্টিফিকেট কোথায়?

প্রধান বিচারপতি বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরীর তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলের বিরুদ্ধেতো মামলা হয়নি। আপনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। রায়ে সব কিছু বিবেচনা করা হয়েছে।

তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, এটাই শেষ সুযোগ। আমার এফিডেভিট পরীক্ষা করে দেখুন।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন রিভিউ পর্যায়ে এসে এসব তথ্য-উপাত্ত বা আবেদন নেওয়ার স্কোপ কম। সুযোগ নেই, সরি।

খন্দকার মাহবুব বলেন, তাহলে তাদের (সাক্ষীদের) অডিও রেকর্ড নেন।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরি।  

এরপর আদালত রিভিউ শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন।

গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ।   একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
 
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।
 
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
 
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।
 
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৫
ইএস/এএসআর

** মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীর রিভিউ শুনানি ১৭ নভেম্বর
** সাকা চৌধুরীর রিভিউ শুনানি ১৭ নভেম্বর
** মুজাহিদের রিভিউ শুনানি ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।