ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। এখন রিভিউ শুনানি চলছে।
জামায়াত ও বিএনপি নেতার এই ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী সহ সারাদেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। গোয়েন্দা পুলিশের এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীতে এসব সংগঠনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তৎপর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। তাদের সহায়তা দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। এরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংগঠনের চেষ্টা করছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করতে ৠাব তৎপর রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৠাবের চেক পয়েন্ট বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সব সময় ৠাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তবে সম্প্রতি কিছু ঘটনার পর গোয়েন্দা নজরদারি আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজধানী সহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে র্যাবের একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে অনলাইন সম্মেলন করে সরকার উৎখাত করে খিলাফত রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিলো হিযবুত তাহরীর। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে ৭ হিযবুত তাহরীর সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সম্প্রতি, ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াত-বিএনপিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন সরকারের একধিক মন্ত্রী-এমপি। এদিকে গাবতলীতে নিহত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যার ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা বলেছেন তারা।
এদিকে গত ২৮ অক্টোবর বুধবার সকালে রাজধানীর ছয়টি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জামাত-শিবিরের ২২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর আদাবর, মোহাম্মাদপুর, যাত্রাবাড়ী, কাফরুল, শাহ্-আলী ও মিরপুর থানা এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে সর্বমোট ২৪ টি ককটেল, ২টি পেট্রোল বোমা, ১টি ব্যানার ও ২১৩টি নিষিদ্ধ বাংলাদেশ জামাত-শিবিরের এর পোস্টার উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশ জামাত-শিবিরের সক্রিয় সদস্য বলে জানায়।
গ্রেফতার হওয়া কর্মীদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর মহলের নির্দেশে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য সরকারি সম্পত্তি বা প্রতিষ্ঠানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করছিল তারা।
নাশকতাকারীরা যেন রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন সড়কে বসানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেক পয়েন্ট। রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক চেক পয়েন্ট।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে যাতে কোনো নাশকতা সংগঠিত হতে না পারে তার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে একধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু সদস্যকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। যাদের চলাফেরায় সন্দেহ হচ্ছে তাদেরকেই তল্লাশি করছে পুলিশ। বিগত সময়ে রাজধানীতে ককটেল হামলা করে দ্রুত পালাতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই মোটরসাইকেল আরোহীদের থামিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তল্লাশি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এসজেএ/আরআই