ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সদর থেকে দক্ষিণে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরে সচরাচর যেতে সময় লাগে সাকুল্যে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। কিন্তু হাটবার হলে দাপুনিয়া ব্রিজের এপার-ওপারের মাত্র ৩শ’ গজ পার হতেই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ এ ৩শ’ গজ পেরুতে সময় লেগেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। এর ফলে ময়মনসিংহ থেকে সবচেয়ে কাছের উপজেলা ফুলবাড়িয়া হয়ে গেছে দুর্গম। সড়কের দু’পাশে হাটবাজার, ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড আর দাপুনিয়া ব্রিজের উন্নয়ন বিড়ম্বনার কারণে চরমে উঠেছে জনদুর্ভোগ। দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে দাপুনিয়া।
মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হবার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় মাস দুয়েক ধরে এ অবস্থা চললেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। ফলে তিক্ত অভিজ্ঞতা আর ক্ষোভ নিয়েই এ পথে নিয়মিত চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের দাপুনিয়া বাজার এলাকার সড়কের দু’পাশ দখলে চলে গেছে। শর্ত ও বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে সড়কের দু’পাশ দখল করে বাজার বসিয়েছেন ইজারাদার। বাজারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এখানে বসেছে বাজার, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
তাদের ভাষ্যে, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শনিবার হাটবার হলে তো কোন কথাই নেই। ১০টা থেকে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে যান সবজি, ভোগ্যপণ্য ও ফল ব্যবসায়ীরা। প্রায় প্রতিদিনই তাদের দৌরাত্ম্যে এখানে কচ্ছপগতিতে চলে যানবাহন।
সড়কের এক পাশ দখল করে সবজির দোকান দিয়েছেন স্থানীয় উজান ঘাগড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন (৩০)। তাদের হাট-বাজারের কারণেই প্রতিদিন যানজট হয় এ কথা স্বীকার করলেও তিনি অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দেন বাজার ইজারাদারের দিকে।
আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ইজারাদার সাবেক কমিশনার আব্দুল মান্নানের লোক কালামকে ৫০ টাকা জমা দিয়াই এইখ্যানে বসছি। আমার মতো সবাই টাকা জমা দিয়া এইখানে বসে। সব দোষ তো ইজাদারেরই। একই রকম কথা শোনা গেলো স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, সুহিলা গ্রামের আলাল উদ্দিনের কাছ থেকেও।
আবার কোন কোন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জানান, প্রায় দু’মাস ধরে এখানে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ দাপুনিয়া ব্রিজ। এ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর এ কারণে একদিকে বড় যান গেলে অন্যদিক থেকে কোন যান আসতে পারে না। ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকা থেকে এসেছেন পিকআপ চালক মিশু (৩০)। দু:সহ জ্যামে গাড়ি স্টার্ট রেখেই ঘণ্টাখানেক ধরে বসে আছেন। যানজটের কারণ সম্পর্কে বলেন, রোড তো ক্লিয়ার না। রোডের দু’পাশে বাজার। আবার রোড দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটো রিকশা স্ট্যান্ড। একটুকু জায়গাও খালি নাই।
ময়মনসিংহ থেকে ফুলবাড়িয়া যাচ্ছেন ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী সহকারী আব্দুল মালেক। সড়কের দু’পাশে হাটবাজারের কারণে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আগে ফুলবাড়িয়া যেতে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লাগতো না।
এখন দাপুনিয়া ব্রিজ পার হতেই দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সড়কের দু’পাশে হাটবাজার উচ্ছেদ করা না হলে এ দুর্ভোগ কমবে না।
কৃষি ব্যাংকের দেওখোলা ব্রাঞ্চে চাকরি করেন তাসলিমা বেগম (৪০)। দেওখোলা থেকে ময়মনসিংহ শহরের উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। ভয়াবহ যানজট থাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে নেমে হাতে ভারী ব্যাগ নিয়ে হেঁটে ব্রিজের ওপার থেকে এপার হচ্ছিলেন।
ক্লান্তি আর ক্ষোভ একাকার কণ্ঠে বলেন, প্রতিদিন আসার সময় এখানে জ্যাম হয়। বাজার কমিটি কোন কাজই করে না। অবৈধভাবে বাজার বসিয়ে শুধু ট্যাক্স নেয়। সব ভোগান্তি আমাদের মতো নিরীহ পাবলিকের।
নির্মাণাধীন দাপুনিয়া ব্রিজের কারণে যানজট হচ্ছে না দাবি করে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন বলেন, এ ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এখন বিকল্প পথ নির্মাণ কাজ চলছে। দ্রুত ওই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
তবে এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম মো: ওয়ালিদ বলেন, সড়কের দুপাশে বাজার বসানো বেআইনি। ইজারাদারের শর্ত ভঙ্গের শামিল। জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনে সড়কের দুপাশে বাজার না বসাতে শিগগির সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে চিঠি দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
জেডএম/