ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই দলের কাছে মনোনয়ন দেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদান করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভার) বিধিমালা চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।
ইসির প্রস্তাবিত বিধিমালা থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে দল একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেবে। মনোনয়পত্র বাছাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ে প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চূড়ান্তভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দলের একজন প্রার্থীই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকেই দলের বাইরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিতে হবে।
প্রস্তাবিত বিধিমালার (ইইই) দফায় বলা হয়েছে- রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত এই মর্মে প্রত্যায়ন থাকতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক দল মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র প্রদান করতে পারবে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যযনির্বাহকের নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবে এবং তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করতে হবে। যদি একই পদে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রদান করা হয়ে থাকে তবে বিধি ১৭ এর ২ উপবিধি অনুযায়ী প্রত্যাহার করা যাবে।
উপবিধি ২ এ বলা হয়েছে- বৈধভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থী তদকর্তৃক স্বাক্ষর একটি লিখিত নোটিশ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন বা তার পূর্বে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বয়ং বা লিখিত অনুমোদিত কোনো প্রতিনিধি মারফত দাখিল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো নোটিশ কোনো অবস্থাতেই প্রত্যাহার বা বাতিল করা যাবে না।
এদিকে পূর্বে নির্বাচিত হওয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিধিমালার সংশোধনী প্রস্তাবে (ইইইই) দফা সন্নিবেশ করে বলা হয়েছে-মেয়র বা সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর বা সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ইতিপূর্বে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা সংযুক্ত করার প্রয়োজন হবে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে তার নির্বাচিত এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। তবে সংশোধনীতে মেয়রের জন্য ৪শ’ এবং কাউন্সিলরদের জন্য ৫০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। আসন প্রতি দলের ব্যয়সীমা রাখা হচ্ছে এক লাখ টাকা। তবে কোনো দল একটি মাত্র পৌরসভায় প্রার্থী দিলে সবোর্চ্চ ব্যয় দেখাতে পারবে এক লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন করলে দলকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে ২৪৫ পৌরসভায় দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সংশোধিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনী বিধিমালা ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজও করছে ইসি।
সোমবার (২ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি পৌরসভা আইনের সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করলে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) এর গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপরই নির্বাচন কমিশন সংশোধনের আলোকে বিধিমালাও সংশোধন করছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থন নেওয়ার বিধানটি কর্মকর্তারা চান না। কেননা, সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক কম থাকে। তবুও রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে হিমশিম খান। ২৪৫ পৌরসভায় মোট আসন সংখ্যা হবে ৩ হাজার ৪শ’ টি। প্রতিটি পদের জন্য ২ জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ালেও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা অসাধ্য হয়ে যাবে।
তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সমর্থকের বাধ্যবাধকতা চান না তারা। কেননা, এতোজন সমর্থকের সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, আগে স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্দিষ্ট ভোটারের সমর্থন নেওয়ার বিধান ছিলো না। তখন সমস্যা হয়নি। কাজেই এখনো না থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হবে, তাই প্রার্থীর সংখ্যা অনেকে বেড়ে যাবে। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভোটারদের সমর্থন নেওয়ার বিধানটি তুলে বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে।
ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সংশোধনের একটা প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য বুধবারই পাঠাবো। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও নেওয়া হবে। তবে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেও মতামত নেওয়া হতে পারে। কেননা, শিগগিরই বিধিমালা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
ইইউডি/জেডএস/এএসআর