বান্দরবান: বান্দরবানের আলীকদমে সশস্ত্র সংগঠন এমএনপির (ম্রো ন্যাশনাল পার্টি) সক্রিয় ৭৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে।
এরই মধ্যে সংগঠনের সশস্ত্র দু’টি গ্রুপের ব্যবহৃত ৬০টি অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আত্মসমর্পণের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার, বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়ন কমান্ডার, ম্রো আদিবাসী গোষ্ঠীর জনপ্রতিনিধিরাসহ সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
তবে আত্মসর্পণের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
বান্দরবান ম্রো কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ংলক ম্রো জানান, সশস্ত্র ৭৮ জন এমএনপি সদস্য অস্ত্র ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা শীর্ষস্থানীয় ম্রো নেতাদের অনুরোধে ও নিরাপত্তা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, আলীকদমের রেংসক পাড়া, সংয়ে পাড়া, থানচি উপজেলার চাকুপাড়া, কুরুক পাতা, নিয়াদুই পাড়া, মারান পাড়া, চাইয়াং পাড়া, অম্পুং পাড়া, ওয়াকপাড়া, বোডিংপাড়া, অমুই পাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের মংহ্লাপাড়া, লুলেং হেডম্যান পাড়া, নিওয়াকপাড়ার ও রুমা উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় আত্মগোপনে থাকা এমএনপির অনেক সদস্য আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ম্রো জনগোষ্ঠীর অনেকে জানায়, বান্দরবানে ম্রো যুবকদের নিয়ে ২০১১ সালে ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) নামে সশস্ত্র সংগঠনটি গঠিত হয়। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের শুরুর দিকে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের কথা বললেও পরে পাহাড়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি, খুন, অস্ত্র বেচা-কেনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকায় একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল সংগঠনটি।
থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো ও আদিবাসী গবেষক সিইয়ং ম্রো জানান, এমএনপির মেনরুম ম্রো গ্রুপের ৬৪ জন ও লুইপ ম্রো গ্রুপের ১৪ জন বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করবেন। তাদের ব্যবহৃত দেশি ৬০টি অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও বিপুলসংখ্যক গুলি এরই মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির অপতৎপরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তারা আরও জানান, ১৬ অক্টোবর আলীকদম জোনে স্থানীয় ম্রো প্রতিনিধি ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক এমএনপির ৭৮ সদস্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপেলা রাজু নাহা বাংলানিউজকে জানান, এমএনপির ৭৮ জন সশস্ত্র সদস্যের বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে। আলীকদমের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এসব এলাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
এসআই