ঢাকা: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনে গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষায় এবং রাষ্ট্রের ও অন্যের সম্পত্তি রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো মুহূর্তে গুলি করতে পারবেন।
বুধবার (০৪ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিজি প্রেসের সামনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আপদকালীন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কি করবে তা দেশের পরিচালিত আইনেই বলা আছে। পুলিশ বা যেকোনো বাহিনী যে ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা আইন দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত। সে আইনে স্পষ্ট করেই বলা আছে কোন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি করতে পারবেন।
যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি বা জনগণের ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি রক্ষায় এবং নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো মুহূর্তে গুলি করতে পারবেন। এজন্য বিশেষ নির্দেশের প্রয়োজন নেই। তবে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা গভীর রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, বলেন র্যাবের ডিজি।
তিনি বলেন, দয়া করে কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। কারণ রাষ্ট্র মহাপরাক্রমশালী। রাষ্ট্র মানে শুধু সরকার নয়। সরকার ও জনগণ মিলেই রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের শক্তি বিশাল। এই ধরণের খুন-খারাবি করে রাষ্ট্রকে পরাস্ত করা যাবে না। যারা এটি করেছেন তাদের খুঁজে বের করা যদি এমন হয়, বিশাল খড়ের গাঁদার মধ্যে আলপিন খুঁজে বের করার মতো কষ্টসাধ্য হলেও আমরা তা করবো। তাদের খুঁজে বের করবো।
বেনজীর বলেন, নিরাপত্তার জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছি। আজ (বুধবার) সকালে ঢাকা মহানগরের বাইরে আশুলিয়াতে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের উপর হামলা করা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এই খুনি চক্রের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের হিসাব মতে রাজীব হায়দার থেকে শুরু করে দীপন পর্যন্ত ১২ জন এই চক্রের হাতে নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৬টি ক্ষেত্রে আমাদের তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। ৩টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। একটি বিচারে আছে। বাকি ৬টির বিষয়ে আমরা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।
র্যাবের ডিজি বলেন, গত ২২ তারিখে ঢাকা মহানগরের একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন এই চক্রের হাতে। এই খুনি চক্রের একজন গ্রেফতার হয়েছেন। তার কাছ থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি কারা এটি করেছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই খুনি ও জঙ্গি চক্র যারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করা।
সাধারণ জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আমাদের অনুরোধ আপনারা আতঙ্কগ্রস্থ হবেন না। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা ইতোপূর্বে একাধিকবার এদের পরাজিত করেছি। এবারও করবো ইনশাল্লাহ্।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছি। বর্তমান প্রবণতার নিরিখে বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুসংহত করার প্রয়োজন আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তাই বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক জঙ্গিকে আমরা গ্রেফতার করেছি। জঙ্গি দমন র্যাবের একটি চলমান ম্যান্ডেট। আমরা এটি করে যাচ্ছি। আমাদের এই জঙ্গি দমন কার্যক্রম কার্যকর রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
জঙ্গি দমনে বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জ তা জনগণের সমর্থন নিয়ে উত্তরণের আশাবাদ ব্যক্ত করে বেনজীর বলেন, যারা এসব কাজ করছে তাদের আমরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫/আপডেটেড: ০৩১২ ঘণ্টা
এএসএস/এসআর