ঢাকা: শ্যামলী কলেজ গেট থেকে ফার্মগেট। এই দুই স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্ব ২ দশমিক ২ কিলোমিটার।
ঘটনাটি সোমবার (০২ নভেম্বর) দুপুরের। বাংলামটরে অবস্থিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা মনির হোসেন। থাকেন শ্যামলীর কলেজ গেট এলাকায়।
পারিবারিক কারণে সকালে অফিসে আসতে পারেননি। দুপুরের খাবার শেষে অটোরিকশায় করে অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এ সময় তাকে সিএনজি ভাড়ার এ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সোমবার শ্যামলী, ফার্মগেট, শাহবাগ রুটটিতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যার খেসারত হিসেবে পকেট কাটা অটোরিকশা ভাড়া গুণতে হয়েছে মনির হোসেনকে।
যানজটের কারণে সিএনজির চাকা না ঘুরলেও মিনিটে মিনিটে বাড়তে থাকে ভাড়ার অঙ্ক। এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট যানজটে আটকে থেকে এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে সিএনজি থেকে নেমে যান এই বেসরকরি কর্মকর্তা। তবে ততোক্ষণে তার ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৪ টাকায়। এর মধ্যে অটোরিকশার প্রকৃত ভাড়া ৪২ টাকা। বাকি ১৭২ টাকা তাকে গুণতে হয়েছে যানজটে আটকে থাকার কারণে।
এটি শুধু এক মনির হোসেনের ঘটনা নয়। সোমবার আজব ঢাকাতে এমন গজব ভাড়া গুণতে হয়েছে অসংখ্য অটোরিকশা যাত্রীকে। অথচ সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে সরকার রাজধানীতে মিটারে চলাচল করা বাধ্যতামূলক করেছে। সেই সঙ্গে অটোরিকশা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
নতুন নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের প্রথম দুই কিলোমিটারে ভাড়া দিতে হবে ৪০ টাকা, যা আগে ছিলো ২৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা, যা আগে ছিলো ৭ টাকা। আর বিরতি সময়ে (যানজটে আটকে থাকলে) প্রতি মিনিট ২ টাকা, যা আগে ছিলো ১ টাকা ২৫ পয়সা।
তবে মজার বিষয় হলো প্রায় প্রতি যাত্রীর দূরত্বের জন্য যে ভাড়া গুণতে হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে তার থেকে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে বিরতি সময়ের জন্য। আবার মিটারে বিরতির সময় ওঠার নিয়মটিও বেশ মজার। স্প্রিডব্রেকার বা অন্য কোনো কারণে ব্রেকে পা পড়লেই সিএনজির মিটারে বিরতির সময় উঠতে থাকে।
আর যানজটে আটকে থাকলে তো উঠেই। এ সময় অটোরিকশার স্টার্ট বন্ধ করলেও অটোমেটিক চলতে থাকে বিরতি সময়ের গণনা।
মনির হোসেনের মতো অটোরিকশা ভাড়ার একই ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন আরো এক বেসরকারি কর্মকর্তা মো. সায়েম। অসুস্থ মাকে ডাক্তার দেখাতে তিনি সকালে রাজধানীর রামপুরা থেকে শ্যামলীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যান অটোরিকশায় করে। এ সময় তিনি ভাড়া দেন ১৮০ টাকা।
তবে ফেরার পথে তাকে ভাড়া গুণতে হয় ৪২০ টাকা। অথচ শ্যামলী থেকে রামপুরার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। শ্যামলী থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, রামপুরা প্রতিটি সিগনাল পয়েন্টে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার কারণে তাকে এই আকাশচুম্বি ভাড়া গুণতে হয়েছে।
অপর এক যাত্রী আরিফুল। অটোরিকশায় করে কলাবাগান থেকে বাড্ডা রুটে ৭ কিলোমিটার এসে তাকে ভাড়া গুণতে হয়েছে ৩১৬ টাকা। ৭ কিলোমিটর পথ অতিক্রম করতে তার বিরতি হয় (যানজটে আটকে থাকা) ১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট। অর্থাৎ বিরতি সময়ের জন্যই তাকে গুণতে হয়েছে ২০৮ টাকা।
মনির হোসেন, মো. সায়েম ও আরিফুলের মতো অসংখ্য অটোরিকশা যাত্রীকে সোমবার এমন ভাড়া নৈরাজ্যের মুখোমুখী হতে হয়েছে। এতে রাজধানীতে মিটারে অটোরিকশা চলাচল করা বাধ্যতামূলক করায় যাত্রী না চালক কে-লাভবান হয়েছে তা নিয়ে খোদ যাত্রীরাই বিভ্রান্তিতে।
ফার্মগেটে কথা হয় একটি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তার সঙ্গে। মিরপুরের বাসিন্দা এই বিমা কর্মকর্তা বলেন, আগে মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজার অটোরিকশায় চুক্তিতে আসতে খরচ হতো ১৮০ থেকে ২’শ টাকা। এখন মিটারে এসে ভাড়া তার থেকে বেশি ছাড়া কম লাগছে না।
রোববার (১ নভেম্বর) মিটারে ভাড়া উঠে ২২০ টাকা। আর সোমাবার তা বেড়ে হয়েছে ৩৩০ টাকা।
তিনি বলেন, দূরত্বের জন্য অটোরিকশা ভাড়া যা দিতে হচ্ছে, যানজটের জন্য দিতে হচ্ছে তার থেকে বেশি। আর রাজধানীতে কখন কোন রাস্তায় কত সময় যানজট থাকে তার কোনো সীমা নেই। এখন দেখা যাচ্ছে মিটারের চাইতে চুক্তিতেই সিএনজিতে যাতায়াত করা লাভের ছিল।
রামপুরায় কথা হয় অটোরিকশা চালক আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিলো অটোরিকশা ভাড়া না বাড়িয়ে মালিকের জমার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। তাহলেই অটোরিকশার যাত্রীরা লাভবান হতেন। আর ভাড়া বাড়িয়ে এখন যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে এতে যাত্রীদেরই ক্ষতি বেশি হবে। কারণ রাজধানীতে এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা যানজট হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এএসএস/আরএ