কুমিল্লা: জনগণের সঙ্গে সরাসরি স্কাইপ-এর মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্স করে শুনানি কার্যক্রম চালু করেছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
দেশে প্রথম তিনিই জনসেবায় এ ই-সার্ভিস কার্যক্রম শুরু করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহের প্রতি বুধবার কুমিল্লা জেলার ৩/৪টি করে উপজেলা/ইউনিয়নে ভিডিও কনফারেন্স করে গণশুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল।
এ পর্যন্ত মোট ৪৪ দিবসে জেলার ১৬টি উপজেলার মানুষের সঙ্গে ১৩৫টি ভিডিও কনফারেন্স করে গণশুনানি করে প্রায় ১ হাজার মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়েছে।
এসব ভিডিও কনফারেন্সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, সীমান্তবর্তী এলাকা হলে বিজিবি কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একটি খামার একটি বাড়ি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, উপজেলা ভূমি অফিস এবং ইউএনওর অফিসে এ ভিডিও কনফারেন্স হয়। এতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক , অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এনডিসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। ফলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যা জানাতে পারেন সাধারণ মানুষ। পান সরাসরি সেবার সুযোগ।
জেলা প্রশাসনের গণশুনানিতে সাধারণত বাল্যবিয়ে রোধের উপায়, জন্ম নিবন্ধনে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নয়, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের উপায়, শিক্ষাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া, একটি খামার একটি বাড়ি প্রকল্পের ঋণ বিতরণ, প্রকল্পের অবস্থা ও ঋণ আদায়ের অগ্রগতি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের অবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের অবস্থা, শিক্ষাঙ্গণে নকল রোধে ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংকট, সেচ, খাস জমি, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের খোজঁ-খবর এবং তাদের আর্থিক অবস্থা দূরীকরণে উপায় , মাদক নির্মূল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা ও উন্নতির পদক্ষেপ, ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট-ব্রিজ নির্মাণ, বাজার ব্যবস্থা, সুদ প্রথা নির্মূল , যৌতুক প্রথা নির্মূল, অ্যাসিড ও ইভটিজিং রোধে করণীয়, ব্যাংক স্থাপন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন চাহিদা শোনেন জেলা প্রশাসক। পরে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভিডিও কনফারেন্সে গণশুনানির ফলে মানুষ সহজেই নানা সুবিধা পাচ্ছেন। এতে সময় ও আর্থিক খরচ কমিয়ে টিসিভি এর ফলপ্রসু প্রয়োগে দ্রুত সময়ে অধিক সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আসা বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া তাৎক্ষণিক অভিযোগ শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে অতি দ্রুত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেসব অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় জেলা প্রশাসক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতেন না, এখন তা সরাসরি বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে সরকারি কাজ সর্ম্পকে সাধারণ জনগণের সামনে চ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
এভাবে সহজেই সেবা পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ।
আর্দশ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষার্থী সাঈদ হোসেন জানান, এ পদ্ধতি শুরু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। এতে সাধারণ জনগণ হয়রানি থেকে রক্ষা পেয়েছে। সরাসরি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা জানাতে পারছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের বাসিন্দা রউফ মিয়া জানান, কুমিল্লা শহরে গিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা জানানোর চিন্তা করা আমাদের পক্ষে দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু ভিডিও কনফারেন্স করে তিনি আমাদের সমস্যার কথা শুনছেন। এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কম সময়ে জনগণের সেবা করার এ পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, কুমিল্লা অনেক বড় জেলা। গ্রামের মানুষ তাদের বিভিন্ন সমস্যা জানানোর জন্য দেখা করতে চাইলে তাদের সময় অনেক অপচয় হবে, অর্থ অপচয় হবে। তাই তাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে এ ব্যবস্থা চালু করেছি।
তিনি বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও, চেয়ারম্যান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সমস্যা সমাধানে নির্দেশ দেই। এতে স্বল্প সময়ে জনগণ উপকৃত হচ্ছে।
সারাদেশে এর প্রয়োগ শুরু হলে জনগণের সেবার পরিধি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এসআর