ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘এটা সিটিং না, চিটিং সার্ভিস’

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
‘এটা সিটিং না, চিটিং সার্ভিস’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ভাড়া নেয় লোকালের চেয়ে তিনগুণ বেশি। সার্ভিস লোকালের চেয়েও খারাপ।

এ পর্যন্ত ছয়টা স্টপেজে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলো। কিসের সিটিং? এটা চিটিং সার্ভিস। ’
 
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ভিআইপি অটোমোবাইলস সার্ভিসের গাড়ির অপেক্ষায় থাকা মধ্যবয়সী এক যাত্রী এমন মন্তব্য করলেন বাংলানিউজের কাছে। তার হাতের টিকিট খুলে দেখা গেলো, টিকেটের গায়ে লেখা ‘সময় নিয়ন্ত্রিত সম্পূর্ণ গেটলক সার্ভিস। ’
 
হেলপার রবিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, তারা আজিমপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর যান। আজিমপুর, নীলক্ষেত, সিটি কলেজ, কলাবাগান থেকে হাউজবিল্ডিং ৫০ টাকা, আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া। এর নিচে কোনো ভাড়া নেই। এরমধ্যে আড়ং, ফার্মগেট, মহাখালীসহ প্রায় সব স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করে এই পরিবহনে।
 
এটা কেমন সিটিং সার্ভিস? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারলেন না হেলপার-ড্রাইভার।
 
শুধু ভিআইপি অটোমোবাইলস সার্ভিস নয়, রাজধানীর প্রায় সব গাড়ির অবস্থা একই। টানা কয়েকদিনের অভিযানের কারণে লোকাল পরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার এমন নৈরাজ্য কমলেও সিটিং সার্ভিসে সুখবর নেই।
 
সিটিং সার্ভিসগুলো দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভাড়া নিয়েও সেবা নিয়ে করছে প্রতারণা। সুনির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে যাত্রী নিয়ে সম্পূর্ণ গেটলক সার্ভিস দেওয়ার কথা থাকলেও এমন কোনো স্টপেজ বাকি থাকে না, যেখানে তারা যাত্রী ওঠানামা করান না।

আব্দুল্লাহপুর থেকে মাওয়াগামী পরিবহন প্রচেষ্টা। সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নিলেও ঢাকায় এমন স্টপেজ নেই, যেখানে তারা যাত্রী ওঠানামা করান না। স্টপেজ ছাড়াও রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠানো হয় এ পরিবহনে। অবস্থা দাঁড়ায় এমন, সিট তো নেই, দাঁড়িয়েও ঠাঁই পাওয়া দায়।
 
যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরগামী ট্রান্স সিলভা পরিবহনেরও একই অবস্থা। গাড়ির ভেতর দাঁড়ানোর জায়গা নেই, তাও যাত্রী ওঠায়। সেটাও নাকি সিটিং সার্ভিস!
 
এমন নৈরাজ্যকর সার্ভিস দিচ্ছে-স্বাধীন এক্সপ্রেস, হিমাচল, বিহঙ্গ, তানজিল, মিরপুর মিশন, আকিক, জাবালে নূর, লাব্বাইক, শিখরসহ আরও অনেক পরিবহন। এসব পরিবহন নামে সিটিং, ভাড়াও কাটে সেভাবে। কিন্তু লোকালের মতো সব জায়গাই থামে, যাত্রীও ওঠানামা করানো হয়।
 
এ নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় সুপারভাইজার-হেলপারের। অনেক সময় হাতাহাতিও হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিটিং সার্ভিসের সুপারভাইজারদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তার প্রধান কারণ এসব বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নেই।
 
এই সিটিংয়ের যন্ত্রণায় নতুন করে যোগ হয়েছে কম স্টপেজ সার্ভিস। এগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট স্টপেজই নেই। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কাও করে না।
 
১ অক্টোবর থেকে সিএনজি চালিত বাস/মিনিবাস/অটোরিকশার কিলোমিটারে ১.৬০ পয়সা ভাড়া বেড়েছে। এই অযুহাতে যাত্রীদের অতিরিক্ত পকেট কাটার সুযোগ পেয়েছে তারা। তাদের এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় গত মাস থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছে।
 
‘এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য অনেকটা কমে এসেছে লোকাল পরিবহনে। কিন্তু সিটিং সার্ভিসগুলো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করেই চলেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। ’ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীও বাংলানিউজের কাছে এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের নামে বাসগুলো যে নৈরাজ্য করছে, তা সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো নজরে আসছে না। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে চলেছে সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো। নামে সিটিং, কিন্তু যাত্রী সেবায় তাদের কোনো নজর নেই।
 
মালিক সমিতি লোকদের নিয়ে বৈঠক করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়, তারপরও কেন তারা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়? এমন প্রশ্ন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, রাজধানীর সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকাকে রক্ষায় যে কোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
 
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে তাদের নিয়মিত ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরপরও কিছু অসাধু মালিক-সুপারভাইজাররা তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকতে পারে।

বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে অভিযোগ করলে বা ফোনে জানালে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

ফোন নম্বরগুলো হলো-৯১১৩১৩৩, ৫৮১৫৪৭০১, ৯১১৫৫৪৪ ও ৯০০৭৫৭৪।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এসইউজে/পিসি/টিআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।