ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পদোন্নতি পেতে দুদক কর্মকর্তাদের ‘হাই লবিং’

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
পদোন্নতি পেতে দুদক কর্মকর্তাদের ‘হাই লবিং’ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পদোন্নতি পেতে উচ্চ পর্যায়ের তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা। নিজেদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে এখন বিপাকে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহীরা।

শেষ মুহূর্তে কাকে বাদ দিয়ে কাকে পদোন্নতি দেবেন এ নিয়ে ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা দুদক কর্তাদের।

দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি থাকার পর চলতি সপ্তাহে পদোন্নতির বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি)। একাধিক বৈঠক করে পদ সংখ্যা নির্ধারণ করলেও নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি এ কমিটি।

দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলানিউজকে বলেন, ডিপিসির বৈঠক হলেও পদোন্নতি প্রাপ্তদের তালিকা চূড়ান্ত হবে কমিশন সভায়। ডিপিসি সুপারিশ করবে। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।

পদোন্নতি পেতে কর্মকর্তাদের তদবির করছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা যে পদে নিজেদের যোগ্য মনে করছেন তারা সুপারিশ করছেন। কেউ কোনো পদে যোগ্য মনে করলে সেজন্য সুপারিশ থাকতে পারে। সিদ্ধান্ততো নেবে কমিশন।

এদিকে দুদকের অপর এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, নামের তালিকা ভাঙা-গড়ার মধ্যেই চলছে। কারো বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ওমুক ওই পদে যাবেই। বিভিন্ন মহল থেকেই আসছে সুপারিশ।

তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা বাদ দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতি পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের একটি অংশ উচ্চ পর্যায়ের একটি অংশকে দিয়ে তদবির করাচ্ছেন। মন্ত্রী, সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন মহল থেকেই কমিশনের কাছে বিভিন্ন নামের সুপারিশ আসছে। আবার কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কাছে গিয়ে নিজের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করছেন।

এদিকে দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বুধবার (৪ নভেম্বর) ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) বৈঠকে প্রথম ধাপে ৪০জনকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এ ধাপে চারজনকে উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পদে, আটজনকে সহকারী পরিচালক থেকে উপ-পরিচালক এবং ২৮ উপ-সহকারী পরিচালককে সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

জানা যায়, পরিচালক পদে প্রথম ধাপে পাঁচজনকে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও এ ধাপে চারজনকে দেওয়া হবে। ডিসেম্বরে পরিচালকের একটি পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে তখন ওই পদে আরেকজনকে পদোন্নতি দিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া এ ধাপে উপ-সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্রটি। এ পদের পদোন্নতি দিতে আরও দু’তিনমাস সময় লাগতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।

পদোন্নতির সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব ও ডিপিসির সভাপতি আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। তবে বিভিন্ন পদে একাধিক নাম আসছে।

দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। একটি সূত্র জানায়, আগামী ৯ নভেম্বর তিনি দেশে এলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে ঝুলে থাকা দুদকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জটিলতা দূর হতে যাচ্ছে।

সচিব নিয়ে জটিলতা অবসানের পর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চলতি সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার কমিশনে ডিপিসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ডিপিসির এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন), মহাপরিচালক (লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন) এবং পরিচালক (প্রশাসন)। তবে মন্ত্রিপরিষদের একজন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কোনো বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না তিনি।

চলতি বছরের ১০ মে কমিশন বৈঠকে পাঁচ পরিচালকসহ ৪৭ কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দুদকের সাবেক সচিব মাকসুদুল হাসান খান এতে স্বাক্ষর না করায় জটিলতা তৈরি হয়। পরে সাবেক সচিবের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

সাবেক এ সচিব জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির পক্ষে মত দিলেও কমিশনাররা জ্যেষ্ঠতার পাশাপাশি যোগ্যতা ও দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতির পক্ষে মত দেন। উভয়পক্ষে দীর্ঘ আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত এ পদোন্নতির বিষয়টি ঝুলে যায়।

এ মতবিরোধের কারণে কমিশন শেষ পর্যন্ত ওই সচিবকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক নাটকীয় ঘটনার পর অক্টোবরে নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়।

আলোচনায় যাদের নাম
পদোন্নতি প্রাপ্তদের নামের তালিকা চূড়ান্ত না হলেও ডিপিসির বৈঠকে কয়েকটি নাম আলোচনায় ছিলো। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে পরিচালক পদে যাদের নাম ডিপিসির টেবিলে আলোচনায় ছিলো তারা হলেন- মো. আক্তার হোসেন, মো. আবু সাইদ, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, সৈয়দ ইকবাল  হোসেন, বেনজীর আহম্মদ, শিরীন পারভীন, সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, হামিদুল হাসান প্রমুখ। এরা বর্তমানে উপ-পরিচালক পদে কর্মরত।

এছাড়া উপ-পরিচালক পদের জন্য যেসব নাম আলোচনায় ছিলো তারা হলেন, সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম, শেখ আবদুস ছালাম, সৈয়দ আহমেদ, আবু বকর সিদ্দিক, রফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) এবং রফিকুল ইসলাম (পটুয়াখালী) প্রমুখ। এরা সহকারী পরিচালক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।