ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দখলের মহোৎসবে চারলেন মহাসড়ক এখন দুই লেন!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
দখলের মহোৎসবে চারলেন মহাসড়ক এখন দুই লেন! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চরপাড়া পয়েন্টে চলছে সড়ক দখলের মহোৎসব। এর ফলে চার লেন সড়কটি সরু হয়ে দুই লেন সড়কে পরিণত হয়েছে।

  

মহাসড়কের দুপাশ দখল করে এলোপাতাড়িভাবে গড়ে উঠেছে হরেক রকমের দোকান। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উল্টো দিকের সুন্দর ফুটপাতও চলে গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কব্জায়।

ফলে এখানে দিন দিন যানজট তো বাড়ছেই, হেঁটে চলারও জো নেই। পথচারী ও যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।

অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরামদায়ক, সহজতর, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া মোড় থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৮৭.১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ৯শ’ ২ কোটি ২২ লক্ষ ৩৭ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

ইতোমধ্যে এ মহাসড়কের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ময়মনসিংহ নগরীতে এ মহাসড়কের সূচনা পয়েন্ট চরপাড়া মোড়। কিন্তু মহাসড়কের এ পয়েন্টটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে হওয়ায় সেখানে বিপরীত দিকে রয়েছে সারি সারি ওষুধের দোকান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেলো, এসব ওষুধের দোকান আর উল্টো দিকের হাসপাতাল গেটের সামনে থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার মহাসড়কে চলছে নজিরবিহীন দখলবাজি। ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্মিত ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে টঙ দোকান, মুদি দোকান, নয়তো খাবারের হোটেল।

আবার মহাসড়কের দুপাশ দখল করে লম্বালম্বিভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ-শতাধিক চা বা পান-সিগারেটের দোকান। দিব্যি চোখের সামনেই দিনের পর দিন দখলদাররা গিলে খাচ্ছেন সড়ক ও ফুটপাত। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির লোক ও স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীরাই ফুটপাত ও সড়ক ভাড়া দিয়ে এমন বাণিজ্য করে চলেছেন, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

নগরীর এ পয়েন্টের মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশেই মাত্র ১০ হাত জায়গাজুড়ে রাজিব আহমেদের ছোট্ট হোটেল। কিন্তু হোটেলের চুলা বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। আর ক্রেতাদের জন্য চেয়ার-টুল পেতেছেন মহাসড়কের উপর। তার এ ব্যবসার কারণে মহাসড়ক সঙ্কীর্ণ হলেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
উল্টো বলেন, সকালে সড়ক বা ফুটপাত দখল করা হয় না। লোকজনের সুবিধার জন্যই বিকেলে চেয়ার-টেবিল বসানো হয়। সড়ক বিভাগ তুলে দিলে উঠে যাবো।

একইভাবে মহাসড়ক দখল করে চা-স্টল দিয়ে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করছেন সদর উপজেলার অষ্টধর এলাকার মোস্তাক ও কাদির। বাংলানিউজকে কাদির বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে এ ফুটপাতে ব্যবসা করি। পুলিশ ঈদের আগে একবার উঠাইয়া দিছিল।

পরে এখন সরকার দলের লোকজন আইসা আমগর মতো ৫০ থেকে ৬০ টি দোকান থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা লইয়া যায়। আবার অনেক ফার্মেসি ব্যবসায়ীও সুবিধা লয়।

তবে মোস্তাক (৩৫) বলেন অন্য কথা। তার ভাষ্যে, পুলিশ আইসা ঠেলা মারলে উইঠা যামু।

ফুটপাত মানেই পায়ে হাঁটার পথ। কিন্তু প্রায় আধা কিলোমিটার ফুটপাত দখল হয়ে যাওযায় এ ফুটপাতে হাঁটার অভ্যাস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে সড়ক দিয়েই।

ফুটপাতের উপর বড় বড় দুটি চুলা বসিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ী হাবিব। ফুটপাতে চুলা বসাতে কার অনুমতি নিয়েছেন প্রশ্ন করতেই হাসি দিয়ে বলেন, কারো অনমুতি লাগবে কেন? সরকারি জায়গায় দুইটা চূলা বসাইছি। প্রশাসন থেইক্যা বললে উঠাইয়া দিমু।

এ ব্যবসায়ীর দাবি, ওষুধ ব্যবসায়ীরাই টাকা খাইয়্যা মহাসড়কের ওপর পুরি-সিঙ্গারার দোকান দিতে দিছে। আর আমরা বৈধভাবেই পৌরসভাকে ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করতাছি।

এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত কবছর বিরামহীন গতিতে ছুটেছেন। কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী এ মন্ত্রীর নিবিড় খেয়াল-খোঁজ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেও দখলবাজদের দৌরাত্মের কারণে এখন সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঝকঝকে এ মহাসড়ক।

চরপাড়া মোড় এলাকার মহাসড়ক সড়ক আর ফুটপাত দখলের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত এ সমস্যা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসনকে। জনসাধারণের ভোগান্তি চললেও নাগরিক আন্দোলনের নেতাদের মুখেও ‘টু’ শব্দ নেই।

তবে দখলদারদের কারণে চার লেনের ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক দু’লেন হয়ে উঠার বিষয়ে প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মো: শামসুল আলম খান বুধবার বিশেষ অপরাধ সভায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস.এম.মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় ডিআইজি বলেন, মহাসড়কের দুপাশে দখল বন্ধ করা হবে।

মহাসড়কের এ সূচনা পয়েন্টে এমন দখলবাজির বিষয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এমনিক মোবাইলফোনে মেসেজ পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।

নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকায় দখলবাজদের মহোৎসবের বিষয়ে ময়মনসিংহের ট্রাফিক ইনসপেক্টর সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান জানান, মহাসড়ক ও ফুটপাত দখল দেখার দায়িত্ব আমার নয়। ট্রাফিক পুলিশের কাজ যানজট নিয়ন্ত্রণ করা। এর বাইরে আমাদের কোন কাজ নেই।

এ বিষয়ে কতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, খোঁজ নিয়ে শিগগির চরপাড়া মোড় এলাকার ফুটপাত ও মহাসড়কের দুপাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।