বাড়ইপাড়া(আশুলিয়া) থেকে: আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যার ঘটনায় আইএস জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ার অদূরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আইএস’র দায় স্বীকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে আইএস’র অস্তিত্ব নেই।
তাহলে কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত?
যারা বাংলাদেশকে দুর্বল করতে চায়, সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়, মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে চায়, যারা ৭১ ও ৭৫’র ঘাতক, ২০১৩ ও ১৪ সালের নাশকতা সৃষ্টিকারী, সেই ঘাতকরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে- যোগ করেন ডিআইজি।
তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
‘দুর্বৃত্তরা চেষ্টা করবে। সারা পৃথিবীতেই অপরাধ আছে। আর আছে বলেই আমাদের বাহিনী অর্থাৎ পুলিশের অস্তিত্ব। যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমরা তাদের খুঁজে বের করবোই। তাদের আইনের আওতায় আনবো। আপনাদের স্মরণে আছে অনেক বড় বড় অপরাধের ঘটনা আমরা তদন্ত করেছি এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই এ ঘটনায় পার পাবার কোন সুযোগ নেই।
হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন-যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন আমরা সম্ভাব্য অনেক কারণই বিবেচনায় আনি। তদন্ত করতে গেলে সেইসব সম্ভাব্যতাই বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। এবং তাদের পেছনে ছুটে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রথমত এখন যে প্রেক্ষাপট, যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। সেটাকে বানচালের করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে, আরেকটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটা হতে পারে অস্ত্র ছিনিয়ে পুলিশের মনবল ভেঙ্গে দেয়া, দেশকে অস্থিতিশীল করা। মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা। সর্বপরি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা। সেই চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড।
আইএস’র নামে দায় স্বীকার করার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দাবি শতভাগ মিথ্যা। এর অস্তিত্ব নেই। ভুয়া পরিচয় দিয়ে এটা করা হয়েছে। দেশে এমন কোন সংগঠন আছে বলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জানা নেই।
মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে গাইড করার জন্য ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুর রহমানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শুধু নয়, সার্বিক বিষয় নিয়েই কাজ করছে কমিটি। কমিটিকে পাঁচদিন সময় দেয়া হয়েছে। সময় একটু বেশিও লাগতে পারে। তবে আমাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই।
পুলিশের হাতে তো অস্ত্র ছিলো-অস্ত্র ব্যবহারে কি কোন দুর্বলতা ছিলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিক। তখন দেখবো। তবে হ্যাঁ। দুর্বলতা তো অবশ্যই আছে। না হলে কি করে এমন ঘটনা ঘটিয়ে যেতে পারলো ঘাতকরা। এটা হয়তো আমাদের কোন ধারণায় ছিলো না। তবে ঘটনার আকস্মিকতায় কিংবা কৌশলগত কারণেই পুলিশ সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ার সুযোগ পায়নি।
তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাই না। আগের ঘটনাগুলো যেভাবে উদঘাটন করেছি, সেভাবেই দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ হত্যাকারীরা ধরা পড়বে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সংখ্যা অবশ্যই বেশি ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ছিলো পাঁচজন। তবে হামলাকারী কতো জন ছিলো তা তদন্তকারীরা বের করবে।
সিসিটিভির কোনো ফুটেজ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো আমরা এখনই বলবো না। আমাদের কাজ করতে দেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির প্রমুখ।
পরে ডিআইজি চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ কনস্টেবলকে দেখতে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
গত বুধবার সকাল পৌনে আটটায় আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাইড়পাড়ার অদূরে নন্দন পার্কের সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হানা দিয়ে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে মুকুল হোসেন নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে। এ ঘটনায় আহত হয় সেখানে থাকা আরো চার পুলিশ কনস্টেবল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
জেডএম