ঢাকা: অনেকটা দ্রুততার সঙ্গেই সংশোধন করা হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের (পৌরসভা) আচরণ বিধিমালা। যেখানে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
পৌর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারণায় সুযোগ রেখে আনা সংশোধিত বিধিমালার খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইসির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দু’জন নির্বাচন কর্মকর্তাও এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, খসড়া সংশোধনীর ওপর আলোচনার জন্য বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক ইসি’র নির্বাচন সহায়তা শাখা বিভিন্ন দলকে খসড়া বিধিমালাটি পাঠানোর জন্য ফোল্ডার ও চিঠিও প্রস্তুত করে। কিন্তু ‘অজানা’ কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একতরফাভাবেই বিধিমালা সংশোধনের দিকে এগোয় ইসি। ওইদিন রাত নয়টা পর্যন্ত বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী নিজেই লিপিবদ্ধ করেন। আগে যে কাজগুলো করানো হতো সেকশন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে।
বুধবার (০৪ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত খসড়া বিধিমালায় মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রাখা হয়নি। রাতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অতি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি আনা হয়।
একজন নির্বাচন কমিশনার এ সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করেও ফল হয়নি।
এদিকে অন্তত ১০ জন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচনে ভারসাম্য রক্ষা হবে না। কেননা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য যদি কোনো নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় যান, এমনিতেই প্রভাব বিস্তার হয়ে যাবে। এটি ছোট ছোট দলগুলোর জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীগুলোও খুব অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। কাজেই এ বিধানটির কারণে কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার রোধ করা যাবে না। নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডও কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা যুক্তি দেখাচ্ছেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে বলে জাতীয় সংসদের মতোই সব বিধান রাখা হচ্ছে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে এমপি মন্ত্রীরা নিজেরাই প্রার্থী হন। তাই তাদের নিজেদের প্রচারণার জন্যই এলাকায় যেতে হয়। এজন্যই সংসদ নির্বাচনে সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রচারণার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও তাদের প্রচারণার সুযোগ রাখার কোনো যুক্তি নেই।
অন্য এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ দলীয়ভাবে নির্বাচনের বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার পর প্রায় ২০ দিন সময় নিয়েছে অধ্যাদেশ করার জন্য। কিন্তু অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশের একদিন পরেই বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলো। অথচ, একটি বিধিমালা করার আগে অনেক গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করতে হয়। আর যেহেতু এটাই দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা যে, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ারও প্রয়োজন ছিল।
ইসি’র সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রাখার বিষয়ে তো একজন নির্বাচন কমিশনার বলেই দিয়েছেন, আমি আর কী বলবো। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ সংবাদ মাধ্যমকে কমিশনের যুক্তি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) বলেছেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় সব বিধান জাতীয় সংসদের মতোই করা হচ্ছে।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে তারা (মন্ত্রী-এমপিরা) প্রচারণায় অংশ নেন, স্থানীয় নির্বাচনেও একই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দলের সদস্যরা বা সুবিধাভোগীরা সরকারি সুবিধা না নিয়ে আগেও প্রচারণায় অংশ নিতে পারতেন, এখনও তাই রাখা হয়েছে। কাজেই নির্বাচনী বিধানে নতুন কিছু যোগ করা হয়নি।
গত ১২ অক্টোবর স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইন সংশোধনের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। এরপর গত সোমবার ( ০২ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আইনের সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়। যার গেজেট প্রকাশ হয় মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর)। ওইদিনই সে অধ্যাদেশের আলোকে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় সংশোধন আনার তোড়জোড় শুরু করে কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
ইইউডি/আইএ/এএসআর