ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সবগুলো ক্ষমতাই নিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাহী বিভাগ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
‘সবগুলো ক্ষমতাই নিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাহী বিভাগ’ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা / ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘এখন নির্বাহী বিভাগ (এক্সিকিউটিভ) আমাদের কাছ থেকে সবগুলো ক্ষমতাই নিয়ে নিতে চাচ্ছে। অতীতে আমরা দেখেছি, যখনই এ ধরনের কিছু হয়েছে আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন।

এখন বিচার বিভাগের প্রতি এক্সিকিউটিভ, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী প্রত্যেকের কাছ থেকে যদি আঘাত চলে আসে এ বিচার বিভাগকে রক্ষা করবে কে?’
 
রোববার (১০ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিম্ন আদালতে নির্দেশনা দিয়েছি, বিকালের শিফটে বেইল পিটিশন ও ইনজাংশন পিটিশন শুনানি করার জন্য। এটা হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তির হার দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জেলায় আইনজীবীরা কোর্ট বয়কট করছেন’।
 
আইনজীবীদের পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়ে কথা বললেও কোর্ট বয়কট করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আইনজীবী ছিলাম, তখন বার কাউন্সিল খুব স্ট্রং ছিলো। আইনজীবীদের এ ধরনের অন্যায় বার কাউন্সিল মেনে নেয়নি। সুনামগঞ্জে পুরাতন মামলা শুনানির কথা বলায় একজন মহিলা বিচারকের কোর্ট বয়কট করা হয়েছে। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান তাকে প্রত্যাহারের কথা বলেছেন’।
 
বিচারপতি এস  কে সিনহা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বার কাউন্সিল কি পলিটিক্যাল সংগঠনের মতো শুধু ভোট চাওয়ার জন্য? আপনাদের অন্যায় আবদার জেলা কোর্টে যেগুলো হচ্ছে, সেগুলো আপনারা চোখ বুঝে সহ্য করে যাবেন কি-না?’ 
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সময় আসছে, বার কাউন্সিল শুধু এগুলোর জন্য না। বার কাউন্সিলের রুলস আছে। যারা রুলস পরিপন্থী  কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার বিধান আছে’।
 
তিনি বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেন। আইনের শাসনের কথা বলেন। আপনাদের ছাড়া কি এগুলো সম্ভব?। আপনারা শুধু আপনাদের স্বার্থের পক্ষের এগুলোকে আমরা যদি সমর্থন করি তাহলে ঠিক আছে। না হলে কোর্ট বয়কট করছেন। এখন এক্সিকিউটিভ আমাদের কাছ থেকে সবগুলো ক্ষমতা যদি চেষ্টা করে সবগুলোই নিয়ে নিতে চাচ্ছে। অতীতে আমরা দেখেছি যখনই এ ধরনের কিছু হয়েছে আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন। এখন বিচার বিভাগের প্রতি যদি এক্সিকিউটিভ, আইনজীবীমহল, বিচারপ্রার্থী প্রত্যেকের আঘাত চলে আসে এ বিচার বিভাগকে  রক্ষা করবে কে?’

‘আমি এই  কারণে বিজ্ঞ আইনজীবীদের সিনিয়র মোস্ট ড. কামাল, ব্যারিস্টার আমীর,  ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমি আপনাদের কাছে আবেদন করছি। আপনারা সারা বাংলাদেশের আগে কিন্তু বার কাউন্সিলের। এই বিল্ডিংয়ে এই যেটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শসহ বিচারক হয়েছেন এখানে সিদ্ধান্ত হয়ে। এখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বার কাউন্সিল এতো বড় সংগঠন, আজকে কেন আপনারা সোচ্চার হচ্ছেন না?’
 
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা আপনারা বলেন। প্রধান বিচারপতি সব সময় বলি। কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা আমি যদি শুধু মুখেই বলি। তাহলে কি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হবে?’
 
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পেতে শাসনতন্ত্রের দিকে আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এখন আপনারা বলেন, যদি বিচার বিভাগের সামান্য যদি ব্যত্যয় হয়  প্রধান বিচারপতি করতে পারছেন না। সুপ্রিম কোর্ট কিছু করতে পারছেন না বলে দোষারোপ করা হয়’।
 
‘সারা বাংলাদেশে সাড়ে তিনশ’ বিচারককে বসাতে পারছি না। তাদের বসার মতো কোর্ট রুম নেই। আমার যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যদি না পাই, বিচারকদের আমি কি রকম হিসেব করবো? আমি মামলাগুলো কি রকম নিষ্পত্তি করবো? এই বারের আইনজীবীরা যদি এ  কথাগুলো বলতেন আমি একমত হতাম’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
 
তিনি বলেন, দুই মাস আগে ভারতে গিয়েছিলাম। বিচারপতি ঠাকুর তখনো প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেননি। তার সঙ্গে ডিনারে চারজন বিচারপতির সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। যারা ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের পরর্বতী প্রধান বিচারপতি হবেন। এটা শুনে আমি শুধু তার মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। আমরা  কোথায়, তারা কোথায়? রুল অব ল’ বলতে কি জিনিস। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি জিনিস। তারা যখন বিচার করবেন, আমরা যখন বিচার করবো এর মধ্যে পার্থক্য আমি বলতে চাচ্ছি না’।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি বিচার বিভাগের জন্য কিছু করতে চাই। তবে যদি আপনারা সহযোগিতা করেন। আমি চাই আপনাদের সহযোগিতা। আমি চাই বিচার বিভাগের ভীত গড়তে’।         
 
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী  সমিতির সহ  সভাপতি আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী  ড. কামাল হোসেন, ব্যরিস্টার এম  আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
 
পরে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।
 
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিচতলায় সপ্তাহব্যাপী এ বইমেলায় স্টলের সংখ্যা ৩৫টি। মেলা চলবে প্রতিদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।