ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খোলা স্কুল, আনন্দ ভ্রমণে শিক্ষকেরা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
খোলা স্কুল, আনন্দ ভ্রমণে শিক্ষকেরা!

বগুড়া: সোমবার, ১১ জানুয়ারি। সরকারি ছুটির বর্ষ পঞ্জিকায় দিনটি ছুটির তালিকায় নেই।

সেজন্য স্বভাবতই বিদ্যালয় খোলা। শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত, কিন্তু শিক্ষকদের দেখা নেই।

তাহলে কোথায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ডিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা? শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর স্থানীয়রা জানালেন, বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে ‍ভ্রমণে গেছেন তারা।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে ওই বিদ্যালয়টি প্রায় শিক্ষকশূন্য পাওয়া যায়।

কেবল সোমবারই নয়, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা আনন্দ ভ্রমণে গেছেন গত ৭ জানুয়ারি। সোমবারও কর্মস্থলে ফিরে আসেননি তারা। ফলে বছরের প্রথম মাসেই চারদিন ধরে পাঠবঞ্চিত থেকেছে শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের ৩৮ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে ২৪ জন শিক্ষকই ছুটি নিয়ে ওই ভ্রমণে গেছেন।

প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এমন ঘটনাকে অভিভাবকরা মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, বছরের শুরুতেই একসঙ্গে প্রায় সব শিক্ষকের আনন্দ ভ্রমণে যাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। তাও আবার স্কুল খোলা রেখে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
 
স্কুল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। কিছু শিক্ষার্থী এক শ্রেণিকক্ষ থেকে আরেক শ্রেণিকক্ষে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে খেলছে। বিদ্যালয়ের অফিসেও কারও দেখা মিললো না। শিক্ষকদের প্রায় সবগুলো চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে।

এ বিষয়ে আলাপ করলে শেরপুর ডিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মোট ৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী এই বিদ্যালয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষকসহ ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী চার দিনের ভ্রমণে গেছেন।

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে বছরের সংরক্ষিত ছুটি থাকে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সেই ছুটি অনুমোদন নিয়েই প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা এই সফরে গেছেন, দাবি করেন তিনি।
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে পাঠদানে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে।
 
আব্দুর রশীদ, বাদশা মিয়া, গোলাম রব্বানী, সোলায়মান আলী, মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর সরকারিভাবে নির্ধারিত ছুটি থাকে। তখন বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যায়। সেই ছুটিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা আনন্দ ভ্রমণে যেতে পারতেন। কিন্তু তারা সেই কাজটি করলেন না। বিদ্যালয় খোলা রেখেই ভ্রমণে গেলেন। এতে সন্তানদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে।
 
এ নিয়ে যোগাযোগ করলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটি চেয়ে তার কাছে একটি আবেদন করা হয়। কিন্তু রোববার (১০ জানুয়ারি) সেই ছুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই স্বভাবতই সোমবার (১১জানুয়ারি) থেকে বিদ্যালিয়টি খোলা থাকার কথা।
 
তিনি বলেন, বিদ্যালয় খোলা থাকাকালে ভ্রমণের নামে বেশিরভাগ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। কেননা এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চরম ক্ষতি হবে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
ভ্রমণে যাওয়া শেরপুর ডিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলানিউজ। এসময় ফোনকল রিসিভ করে তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছি। জার্নির কারণে আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এ মুহূর্তে আব্বুকে ডাকা যাবে না। ’ বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেওয়া গয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমবিএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।