ঢাকা: আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে নারী দেহরক্ষীসহ প্রায় অর্ধশত নিরাপত্তারক্ষীর বাহিনী নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভেতরে একাই প্রবেশ করতে হয়েছে মুসা বিন শমসেরকে।
মূল ফটকের বাইরে তার গাড়ি ও বহরে থাকা গাড়ি রেখে একাই ভেতরে প্রবেশ করেছেন তিনি।
মূল ফটক অফিস চলাকালে খোলা থাকলেও এদিন বন্ধ রাখা হয়। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া এ সময় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
দুদকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরতরা বাংলানিউজকে জানান, মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে ভেতরে কেউ যেনো প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য মূল ফটক বন্ধ রাখার নির্দেশনা তাদের প্রতি এসেছে। সে অনুযায়ী প্রধান গেট বন্ধ।
এদিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে দুদকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে মুসা বিন শমসেরকে। এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম জিজ্ঞাসাবাদে বিশাল বাহিনী নিয়ে দুদকে প্রবেশ করেছিলেন মুসা। এক বছর এক মাস পর একই কায়দায় এলেও তার সঙ্গে আসা কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার মুসা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ভেতরে জিজ্ঞাসাবাদে থাকাকালে বাইরে তার কর্মীরা পাঁয়চারি করছিলেন। বাইরে থেকে তারা ভেতরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন- কখন মুসা বের হবেন।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেলা ১১টায় থাকলেও এর ১০ মিনিট আগেই সকাল বিশাল গাড়ির বহর আর সুসজ্জিত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে দুদকের সামনে আসেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ভেতরে যাওয়া যাবে না জেনে মূল ফটকের বাইরে নেমে একা ভেতরে যান তিনি।
কালো রঙের ব্লেজারের সঙ্গে তার পরনে রয়েছে সাদা শার্ট, লাল রঙের টাই এবং সোনালী রঙের রোলেক্সের হাতঘড়ি। পায়ের জুতা হীরায় খচিত বলে তার বহরে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এমন সুসজ্জিতভাবেই সাদা রঙের মার্সিডিঞ্জ বেঞ্জে চড়ে রাজকীয় কায়দায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আসেন মুসা বিন শমসের। দুদকে প্রবেশ করার আগে তার সামনে ও পেছনে এক ডজন গাড়ি ছিলো। ৬ জন নারী দেহরক্ষীসহ প্রায় ৫০ জনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মকর্তা নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আসেন। বাইরে তার নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে ওয়াকিটকিও দেখা গেছে।
বেলা ১১টায় তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী তাকে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মুসার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। ড্যাটকোর মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রফতানি করে।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় মুসা বিন শমসেরকে ‘বিজনেস মোগল’ এবং ‘প্রিন্স মুসা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান।
মুসা বিন শমসের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই। মুসার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।
গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও এর একদিন আগেই তিনি ‘ডেথ ফোবিয়া’সহ একাধিক রোগ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানান। সময়ের আবেদন করা কপি দুদকের চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার, অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালক এবং অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী বরাবর দেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছিলেন, ‘তার চাহিদা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনমাস পেছানো সম্ভব নয়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদকে হাজির হতে হবে’।
এরপর ২৮ জানুয়ারি হাজির হতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাকে নোটিশ পাঠান।
সুইস ব্যাংকে অর্থ আছে কি-না তা যাচাই করতে গত ৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে দ্বিতীয়বারের মতো তলব করে দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে তাকে ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সময়ের আবেদন জানান। এ আবেদন আমলে না নিয়ে দুদক ২৮ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার সময় বেধে দেয়।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। ওই জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১৯ মে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। এ নোটিশের প্রেক্ষিতে ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন তিনি। সম্পদ বিবরণীতেও তিনি সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) জব্দ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন।
সুইস ব্যাংকে ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলঙ্কার জমার তথ্যও দেন তিনি। এছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দু’টি বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির কথাও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।
২০১৪ সালের শেষের দিকে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক প্রথম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদে মুসা হীরার জুতা থেকে শুরু করে আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন। সঙ্গে ছিল নারী-পুরুষের অর্ধ শতাধিক এক দেহরক্ষী বহর।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৪
এডিএ/এএসআর
** দুদকে মুসা বিন শমসের, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ