ঢাকা: অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সবার সহযোগিতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব হবে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘অ্যাচিভিং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
সামিটে অংশ নিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, ভুটানের পার্লামেন্টের স্পিকার জিগমে জ্যাংপো, মালদ্বীপের পার্লামেন্টের স্পিকার আব্দুল্লাহ মাসিহ মোহাম্মদ ও আফগানিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার আব্দুর রউফ ইব্রাহিমী।
তবে সামিটে যোগদানের লক্ষ্যে রওয়ানা দেওয়া শ্রীলংকার ডেপুটি স্পিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। আর পাকিস্তান ও নেপালের স্পিকারকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা যোগ দেননি।
ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) আয়োজিত এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সহায়তায় এই সামিট বা সম্মেলন হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইপিইউ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ও দারিদ্র্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বক্তারা।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশ তার সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন করতে পারে। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সুমিত্রা মহাজন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন তার সুফল ভোগ করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বেই এই দেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দী হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।
আইপিইউ ও সিপিএ’র মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় কোনো বাংলাদেশি প্রধান হওয়ায় সুমিত্রা মহাজন ওই সংস্থা দু’টিকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এটা সত্যিই গর্বের বিষয়। বাংলাদেশে যে উন্নয়ন করছে, এটা তার প্রমাণ।
সুমিত্রা এসময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছোটবোন সম্বোধন করে বলেন, তিনি সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ায় অভিবাদন জানাই । এছাড়া, সাবের হোসেন চৌধুরী ভাইকেও অভিবাদন।
ভারতীয় স্পিকার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো খুবই জনবহুল। এজন্য এসডিজি বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের মত জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে।
সুমিত্রা মহাজন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শুধু ইতিহাস শেয়ার করে। আমাদের সংস্কৃতি, ভৌগলিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থান প্রায় একই। এজন্য আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন মালদ্বীপের স্পিকার আব্দুলাহ মাসিহ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
সম্মেলনের ধারণাপত্রে বলা হয়, এসডিজি’র সফলতা সারাবিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আইপিইউ’র সদস্য দেশগুলো এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
আইপিইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার এবং শ্রীলংকার ৩৮৪ মিলিয়ন লোক ধূমপান করে। যা বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বে টোবাকো ব্যবহারকারী রয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন। কেবল বাংলাদেশ এবং ভারতেই প্রতিবছর ১ দশমিক ১ মিলিয়ন লোক ধূমপানের কারণে মারা যায়।
এজন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান করা হয় ধারণাপত্রে।
দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষ দিন রোববার (৩১ জানুয়ারি) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সম্মেলনের আলোচনায় পাঁচটি বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। এগুলো হলো- দক্ষিণ এশিয়ায় এসডিজির গুরুত্ব, এসডিজি বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনায় পার্লামেন্টগুলোর ভূমিকা, এসডিজির স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি সংক্রান্ত গোল-৩ এর অধীন সুযোগসমূহ, তামাক মহামারির বর্তমান অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নীতিকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬/আপডেট ১২৫৯ ঘণ্টা/আপডেট ১৪২৩ ঘণ্টা
এসএম/টিআই/এইচএ/