ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় নিতে চেষ্টা করছেন প্রধান বিচারপতি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
‘বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় নিতে চেষ্টা করছেন প্রধান বিচারপতি’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিচার বিভাগের সংস্কারে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার গৃহীত পদক্ষেপকে সমর্থন দিতে আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী।

‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিরাজমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।



সাবেক এ প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। আপনাদের উচিত, তাকে সহযোগিতা করা। বিচার বিভাগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আপনারা বিচার বিভাগকে বাঁচান। দেশ রক্ষা করুন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করুন’।

মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক।

সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এসএম খসরুজ্জামান ও জাহিদুল বারী প্রমুখ।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘শুনেছি, এটি সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ দেখেছি, তা খুবই বিপদজনক। যেকোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারবে সরকার’।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রায় লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় নিয়ম ছিল, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতিরা এজলাসে বসে রায় ঘোষণা করবেন, আইনজীবীরা বসে শুনবেন, কোনো কিছু বাদ গেলে তো বলবেন। আর আপিল বিভাগ শুধু আদেশের অংশ ঘোষণা করতেন। পূর্ণাঙ্গ রায় আসবে পরে। তাই আমি করি না যে, অবসরের পর রায় লেখা বেআইনি হবে। তবে অবসরের পর রায় লিখতে হলে কোনোভাবেই আদেশের অংশ পরিবর্তন করা যাবে না। আদেশের অংশ পরিবর্তন করতে হলে রিভিউ করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘এটা না করে ছয়মাস বা এক বছর বা দেড় বছর পর যদি কেউ রাতের অন্ধকারে রায়ের আদেশের অংশ পরিবর্তন করেন, তবে সেটি হবে ফৌজদারি অপরাধ। আমরা তো সেটা করলাম, সেটি ঠিক হয়নি। এ কারণেই প্রধান বিচারপতি বলছেন, এটা বেআইনি’।

অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রবীণ আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কোনো বিশেষ ব্যক্তির নয়, জনগণের। সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং দেশের ১৬ কোটি জনগণের অধিকার রক্ষার জন্যই এই সুপ্রিম কোর্টের সৃষ্টি। এই সুপ্রিম কোর্ট ও সংবিধানকে যারা ধ্বংসের চেষ্টা করছেন, জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, ‘আমি সারাজীবন দল করেছি, মন্ত্রীও হয়েছি। কিন্তু কখনও সুপ্রিম কোর্টে এসে দলীয় পরিচয় দেইনি। আপনারা মন্ত্রিত্ব করেন, কিন্তু দালালি করবেন না। আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে যে অর্থ উপার্জন করা যায়, সেটাই আইন পেশার বৈশিষ্ট্য’।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দলীয় পরিচয় দিয়ে যেসব আইনজীবী কোর্টে ঘুরে বেড়ান, সে রোগে আক্রান্ত না হওয়াই ভালো।   বিচারক ও সরকারি কৌসুলি হওয়ার জন্য কি দলের দালালি করতে হবে? বিবেক ও চিন্তা শক্তির ওপর নির্ভর করে আইন পেশা পরিচালনা করুন। যদি তা না পারেন তাহলে এ পেশা ছেড়ে দিন’।

তিনি বলেন, ‘এ পেশায় থেকে জাতির পিতা থেকে শুরু করে অসংখ্য লোককে আইনি সাহায্য দিয়েছি, কখনও প্রতিদান চাইনি’।

‘কিছু কিছু জজ যদি কুকর্ম করে থাকেন তাদের হাত থেকে বিচার বিভাগ ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে’ বলেও মনে করেন এই আইনজ্ঞ।

হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্ন যখন আসবে, তখন আইনজীবীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে’।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন বারের সম্পাদক ছিলাম, তখন বারের সদস্য ছিলেন আড়াই হাজার। এরপর ১৫ বছর জজিয়তি করেছি। এখন বারের সদস্য সাড়ে ৬ হাজার। এটা উৎসাহজনক’।

প্রায় ১৫ বছর ধরে বিচারকের চেয়ারে থাকা নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যখন হাইকোর্টে বিচারক ছিলাম, তখন কেউ কখনও অন্যায় অনুরোধ নিয়ে আমার সামনে আসেননি। কারণ, জানেন অনুরোধ করলে উল্টো ফল হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।