বগুড়া: বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামে জায়গায় প্রায় চারশো বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলা বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির ইতিহাস-ঐতিহ্য। মেলা মানেই আনন্দ উল্লাস আর উৎসবে মেতে ওঠার দিন। এ দিনগুলোতে নতুন-পুরনো বলে কোনো কথা নেই। দিনটি উপলক্ষে সবাই বর-বউ ও স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত করে আনেন। তারা মেতে ওঠেন ভিন্ন আনন্দে।
মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) পোড়াদহ গ্রামের জব্বার আলী, মোবারক হোসেন, ইব্রাহিম খাঁসহ একাধিক প্রবীণের সঙ্গে কথা হলে ঐতিহ্যাবাহী মেলাটি সম্পর্কে এসব তথ্য ওঠে আসে।
পোড়াদহ মেলা একটি প্রাচীন লোকজ মেলা। জেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে পোড়াদহ নামে জায়গায় প্রতিবছর এ মেলা বসে। এ কারণে মেলাটি সবার কাছে পোড়াদহ নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
প্রতিটি মেলার পিছনেই কোনো না কোনো লোকগাঁথা থাকে। পোড়াদহ মেলা সম্পর্কে তেমন কিছু লোকগাঁথা রয়েছে। জানা যায়, প্রায় চারশো বছর আগে এ স্থানে একটি বিশাল বটগাছ ছিলো। হঠাৎ একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। এরপর দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে সেখানে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সেটি একটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার সেখানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন। এ দিনটিতে দূর-দূরান্তের ভক্তরা সমাগত হন। সময়ের ব্যবধানে লোকসমাগম বাড়তেই থাকে। এভাবে পূজার দিনটিতে সেখানে গ্রাম্যমেলার গোড়াপত্তন ঘটে।
পরে সন্ন্যাসীরা স্থান ত্যাগ করে চলে যান। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এ জায়গায় পূজা অব্যাহত রাখেন। ধীরে ধীরে মেলার পরিচিতি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মেলাটি ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয়।
পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ বাহারি জাতের মাছ। বড় আকারের মাছগুলো বুধবার ভোর বেলায় এনে আড়তে রাখা হয়। পরে খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছগুলো সেখান থেকে কিনে নিজ দোকানে ওঠান। দোকানগুলোতে দিনভর চলে কেনাকাটা।
এ মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাস, বাঘাইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। মেলায় দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড় পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যায় পনের থেকে বিশ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস মাছ।
পোড়াদহ মেলার আরেক আকর্ষণ রকমারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টিসহ রয়েছে নানা ধরনের মিষ্টি। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টিও পাওয়া যায়।
এছাড়া মেলায় রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। মেলায় কসমেটিক, খেলনা, গিফট সামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকাপ বক্স, ব্যাট, বল ভিডিও গেমসসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। পাশাপাশি কাঠ, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র বেচা-কেনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমবিএইচ/এসএস