ঢাকা: স্কুলের গেটের সামনের দু’টি ময়লার কনটেইনার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। নাকে কাপড় অথবা রুমাল চেপে পথ চলছেন পথচারীরা।
রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শান্তিনগর এলাকার জয়নাল আবেদীন সড়কে অবস্থিত লুৎফা একাডেমীর (হাই স্কুল) সামনের চিত্র এটি।
জানা গেছে, প্রায় সাত বছর ধরে বিদ্যালয়টির গেটের সামনে দু’টি ময়লার কনটেইনার রাখা হয়েছে। আগে এ কনটেইনার দু’টি ছিল এ রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা সংলগ্ন শহীদ মিনারের সামনে। কিন্তু সেখানেও বছর কয়েক আগে একটি নতুন ভবন তোলা হলে কনটেইনার দু’টিকে সরিয়ে স্কুলের সামনে আনা হয়।
ময়লার কনটেইনার দু’টির ব্যাপারে বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি শিক্ষার্থীরা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ময়লার দুর্গন্ধকে সঙ্গে নিয়েই এখন স্কুল করছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করাচ্ছেন অভিভাবকরা। এছাড়া নতুন করে বাচ্চাদের ভর্তি করতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়টি জানানো হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। শুরু থেকেই ফলাফলও বেশ ভাল। প্রতি বছরই জিপিএ-৫ পেয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা। পড়াশোনার মান ভালো হলেও স্কুলের সামনে ময়লার কনটেইনার থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করিয়েও আবার অন্য স্কুলে নিয়ে যান বলে জানালেন শিক্ষকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন স্কুলে আসি তখন রুমাল দিয়ে নাক চেপে স্কুলে ঢুকতে হয়। আবার বের হওয়ার সময়ও একই অবস্থা। আরেক শিক্ষার্থী বলে, এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমরা বহুবার বলেছি কিন্তু স্যাররা চেষ্টা করলেও কাজ হয় না।
শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের প্রধান গেটের সামনে এমন অবস্থা হওয়ার কারণে টিফিনের সময়ে কিছু কিনে খেতে চাইলেও দুর্গন্ধের জন্য তারা গেটের সামনে আসতে পারেন না। এমনকি দুর্গন্ধের কারণে স্কুলের সামনে আইসক্রিম বা অন্য দোকানিরাও বসতে চান না।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর এ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। তাকে অভিযোগ দিলেও তিনি বিষয়টির কোন গুরুত্ব দেন না। তিনি আন্তরিক হলেই এ অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এফ মোবাশ্বারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ অনেকবার দেয়া হয়েছে। মৌখিক অভিযোগও দেয়া হয়েছিল। অভিযোগ করতে করতে আমরা এখন ক্লান্ত। আমাদের শিক্ষার্থীদের স্কুল করতে কষ্ট হয়। আপনারা লেখেন তাহলেই কাজ হবে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফজলে এলাহী বাদল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাচ্চারা তো অনেক কষ্ট করে। এত দুর্গন্ধ যে ওই রাস্তা দিয়ে তারা হাঁটতেও পারে না। এরপরও তারা যে স্কুলে আছে এটাতো আমাদের ভাগ্য। আমরা অভিযোগ করার পর সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা বলেছিল, ‘জায়গা দেখিয়ে দেন আমরা সরিয়ে নেব’।
বাদল জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে এর আগেও সাবেক মেয়রকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কিন্তু তখন কোন কাজ হয়নি। এরপর তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সুপারিশ সম্বলিত আরও একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ ব্যাপারে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপি বাংলানিউজকে বলেন,বিষয়টি মেয়রকে জানানো হয়েছে এখন দেখা যাক তিনি কি করেন।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আছে। অন্যত্র কনটেইনারগুলো সরিয়ে নেব। তবে কনটেইনারগুলো অন্যত্র সরানোর জায়গা পাওয়া গেছে কি না তা জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ: ০০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
এমআইকে/আরআই