ঢাকা: রাতের ঢাকায় দেখা গেলো হঠাৎ আলোর ছন্দবদল। ছিল সোডিয়াম লাইট, এখন এলইডি।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে শাহবাগ যেতে আলোর এই ছন্দবদল চোখে পড়বে।
সোডিয়াম বাতির আলো আঁধারির পর ঠিক প্রজাপতি ফোয়ারা ছাড়িয়ে চোখে পড়বে এলইডি বাতির আলোর বন্যা। যা বিস্তৃত হয়েছে শাহবাগ পর্যন্ত।
একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনার এলাকা পর্যন্ত আলো পাল্টে দেওয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে মৎস্যভবন পর্যন্তও সোডিয়াম আলো পাল্টে এই এলইডি বাল্ব বসানো হবে।
আশির দশকের শেষভাগে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে যে সোডিয়ামের হলুদ আলো এনে দিয়ে রাতের ঢাকাকে মাদকতায় পূর্ণ করে দিয়ে দিয়েছিলেন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেই আলো হটিয়ে এবার অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী, আর বেশি আলোর এলইডি বসলো সড়ক বাতি হিসেবে।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগেই এই পরিবর্তন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই এই সাদা আলো দেখতে পাচ্ছেন রাজধানীর ওই এলাকায় পথচলা মানুষেরা।
ওই দিন সকাল থেকে সড়কের বাতিগুলো পরিবর্তনের কাজ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। কর্মীদেরই একজন বাংলানিউজকে জানান, মেয়রের নির্দেশে এই আলো পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। বললেন, এলইডি অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। আর আলো বেশি দেয়।
প্রাথমিকভাবে সোনারগাঁও হোটেলের মোড় থেকে এই আলো বসানো হবে মৎস্যভবন পর্যন্ত। মোট দুই হাজার বাল্ব বসছে বলেও জানালেন তিনি। এছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই ওই এলাকার বাল্ব পাল্টে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
শুক্রবার রাতের ঢাকায় গিয়ে দেখা গেলো ল্যাম্প পোস্টের সাদা আলোয় মোড়ে মোড়ে জটলা একটু বেশিই। যেন আলো উপভোগ্য হয়ে উঠেছে রাতের ঢাকায়। সাদা আলোর রশ্মি কুয়াশা ভেদ করেও যাচ্ছে বহুদূর।
এক কিলোমিটার বা তারও বেশি পথ; সোনারগাঁও মোড় থেকে শাহবাগ। পুরো পথটাই এলইডি লাইটের আলোকচ্ছটায় ভরা। দিনের আলোর সঙ্গে পার্থক্য করাটা বেশ কঠিন।
সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটি রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। নতুন লাইটিং কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই এক রিকশাচালক সোডিয়াম লাইটের দিকে তাকিয়ে বললেন, ওটার থেকে এটাই (এলইডি) ভালো, দ্যাখেন মনে হয় দিনের আলো। তার সঙ্গে সুর মেলালেন আরো এক চালক।
ততোক্ষণে সহকর্মী আনোয়ার হোসেন রানা সোডিয়াম লাইট ও এলইডি লাইটের ছবি তুলে নিলেন।
এরপর আরও এগিয়ে যাওয়া, বাংলা মোটর মোড়। সেখানে ভিড় আরও বেশি। মোড়ের আয়ল্যান্ডের ওপর বসে চা-সিগারেট বিক্রি করছেন কয়েকজন।
চার রাস্তার মোড়ে সাদা আলোটা বেশি পছন্দ তাদের।
তবে এক অটোরিকশা চালকের ভাষ্য, এই আলোটা গাড়ি চালানোর জন্য বিপদের কারণও হতে পারে।
মিজানুর রহমান নামে ওই চালক বলেন, ওপরে সাদা আলো, গাড়ির লাইটও সাদা। দ্রুত গতিতে গাড়ি এলে গাড়ির লাইট বোঝাটা কঠিন হতে পারে।
এরই মধ্যে তিনি এই সমস্যায় পড়েছেন কিনা? জানতে চাইলে অবশ্য বললেন, সমস্যা হয়নি। আর মিজানুরের কথায় একমত হলেন না অন্যরাও।
বৃহস্পতিবার ল্যাম্প পোস্টের দুই পাশের সোডিয়াম লাইট খুলে এসব লাইট ইমিটিং ডায়ট বা এলইডি বাতি লাগানো হয়।
এলইডি বাতির আলোতে শাহবাগে এক পাশে বারডেম হাসপাতাল, অন্য পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। দুই ধারে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা আর আটোরিকশা চালকেরাও উপভোগ করছেন সাদা আলো।
শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলোও সাদা আলোয় আরও বেশি উজ্জ্বল। সেখানে ফুটপাতের এক চা বিক্রেতা রবিউল জানান, এখানে আজই (শুক্রবার) এই বাতি জ্বালানো হয়েছে। আগে অন্ধকার থাকলেও এখন জায়গাটা আলোকিত।
গত ৩০ জানুয়ারি ‘পরিচ্ছন্ন বছর-২০১৬’ বিষয়ক এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি জানান, রাজধানীতে ৩২ হাজার স্ট্রিট লাইট রয়েছে। এগুলো পাল্টে এলইডি লাইট লাগানো হবে।
মেয়র বলেন, যাতে কোন রাস্তায় অন্ধকার না থাকে, পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে কোন অসুবিধা না হয় এবং নাগরিকরাও যাতে নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারেন সে কারণেই এসব বাল্ব পাল্টে দেওয়া হবে।
মেয়র সাঈদ খোকন সেদিন আরও বলেন, বইমেলাসহ এর আশপাশের এলাকায় ১ ফেব্রুয়ারির আগেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ২১ তারিখের আগে শহীদ মিনারের লাইট পাল্টে নতুন এলইডি লাইট লাগানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
এমএমকে/এমআইএইচ/এসআই