ঢাকা: ‘পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে, এসেছে দারুণ মাস। ' হ্যা, এসেছে ফাল্গুন।
বসন্তের আগমনে ফাল্গুনের ঝির ঝির হাওয়া, রোদ্দুর নতুন মাত্রা যোগ করে নিসর্গে। কোকিলের কুহুতান তো বসন্তেরই মর্মগান। যদিও ইট-পাথরের শহরে কোকিলের ডাক আর কানে আসে না।
বসন্ত মানেই সুন্দরের জাগরণ আর নতুনের জয়গান, নবীনের আগমন। চিরায়ত সুন্দর ভালোবাসা আর নব-যৌবনের প্রতীক হয়ে বসন্ত আসে আমাদের জীবনে।
নারীরা বাসন্তি রঙা শাড়ি আর বসন্তপ্রিয় পুরুষরা হলুদ পাঞ্জাবি পরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।
ফুল ফুটুক আর না ফুটুক…
সময়ের ব্যবধানে বসন্তকে স্বাগত জানানোর আনুষ্ঠানিকতা বাড়ছে, তবে ঋতু বৈচিত্র্যের চিরায়ত পরিবর্তনের ধারা যেন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কষাঘাতে। সেই মন ভোলানো সুবাস আগের মতো যেন মেলে না প্রকৃতিতে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে বাংলার ষড়ঋতু।
ক্যালেন্ডারে বসন্ত শুরু হলেও আগের মতো গাছের ডালে কোকিলের ডাক শোনা যায় না অনবরত। পলাশ, শিমুল ফুটলেও চলার পথে লাল গালিচা বিছিয়ে দেয় না আগের মতো। আমগাছেও কমে গেছে আমের মুকুল। আমের মুকুলের গন্ধ এখন আর তেমন ব্যাকুল করে না মন। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি প্রেমিক মনের। সবকিছু অনুপস্থিত থাকলেও বসন্ত বাঙালির মনে জাগায় আলাদা এক অনুভূতি।
ইতিহাসে বসন্ত
ফাল্গুন তথা বসন্তকাল এলে গ্রাম থেকে নগর-আবহমান বাংলার সর্বত্রই উৎসব শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর ১৩৯০ বঙ্গাব্দের বৈশাখে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের মেলা' শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, গোটা বসন্তে মোট ৩২২টি গ্রামীণ মেলা বসে। এর মধ্যে ফাল্গুনে ৭৩টি ও চৈত্রে ২৪৯টি। মেলাগুলো বসে দোলযাত্রা, চৈত্র তিথি, বারণী, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি বিশেষ উপলক্ষে। এসব মেলাকে ঘিরে প্রতিটি জনপদে থাকে উৎসবের আমেজ। এসব মেলার মেয়াদকাল এক থেকে সাতদিন পর্যন্ত। লোক-কারুশিল্প পণ্য ছাড়াও এসব মেলায় বাহারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। আধুনিক ব্যবহার্য ভোগপণ্যও বাদ যায় না।
বসন্তের আয়োজন
বসন্ত উৎসবের মধ্যে খুঁজে ফেরা সেই বাঙালিয়ানাকে। বনের রঙ থাকুক আর নাই থাকুক, মনের রঙ তো আছে। আর তাই মন মাতানো গান আর নূপুরের নিক্কন যেন কোকিলের অভাবটা পূরণ করে দেয়।
ঢোলের তালে আর শোভাযাত্রার মাঝেও থাকে এক অচেনা অথচ চিরচেনা আনন্দ। বাসন্তি রঙ লাগে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।
বরাবরের মতো এবারও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ রাজধানীতে দিনব্যাপী ‘বসন্ত উৎসব'-এর আয়োজন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে। দিনভর চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চারুকলা, টিএসসি, ফুলার রোড, দোয়েল চত্বর সর্বত্রই থাকবে বসন্ত প্রেমীদের ভিড়। রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন বিভিন্ন ফুলের দোকানে ফুলপ্রেমীদের ভিড় তো আগের দিন থেকেই লেগে আছে।
বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলায়ও লাগবে বসন্তের ছোঁয়া। উচ্ছ্বসিত তরুণ-তরুণীরা সকালে ক্যাম্পাসে আড্ডা শেষে দুপুর থেকেই লাইনে দাঁড়াবে গ্রন্থমেলায় প্রবেশ করতে।
এছাড়া চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, গুলশান পার্ক, কলাবাগান লেক, শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, নারায়ণগঞ্জের ‘তাজমহল’ বা সোনারগাঁও ঘুরতে যাবেন অনেকে।
বসন্তকে ঘিরে বিভিন্ন মিডিয়া, ফ্যাশন হাউজগুলোও বিশেষ আয়োজন করেছে। শুধু ঢাকা নয় সারাদেশই মেতেছে উৎসবের আমেজে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
এডিএ/এসআই