ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাফর-রাজিব স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ-আলোক প্রজ্জ্বলন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
জাফর-রাজিব স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ-আলোক প্রজ্জ্বলন

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণআন্দোলনে নিহত জাফর মুন্সী ও রাজিব হায়দার শোভন স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ ও আলোক প্রজ্জ্বলন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
 
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জাফর ও রাজিব হায়দারের তৃতীয় হত্যা বার্ষিকী স্মরণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চের ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক মুষ্টিবদ্ধ হাতের ফুলেল প্রতিকৃতিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মঞ্চের কর্মীরা।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বরে শুরু হয় গণআন্দোলন। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার লঘু দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ও মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ফুঁসে ওঠেন তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষ। আন্দোলনের ১০ দিনের মাথায় যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের হামলায় নিহত হন মতিঝিল অগ্রণী ব্যাংকের লিফটম্যান জাফর মুন্সী। ১৩ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক ভবনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়তে গেলে জামাত-শিবিরের কর্মীদের বাধা দেন জাফর মুন্সী, যিনি এর আগে গণজাগরণ মঞ্চের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। তখন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন জাফর মুন্সী।

এর ঠিক একদিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থেকে মিরপুরে নিজ বাসায় ফেরার পথে ঘাতকেরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ রাজিব হায়দার শোভনকে।

স্মরণ সমাবেশে রাজিব হায়দারের পিতা ডা. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সন্তানহারা বাবা-মায়ের কষ্ট অনেক বেশি। বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু তাদের কাছে বেশি সহজ। যে আদর্শের জন্য রাজীব প্রাণ দিয়েছে সেই আদর্শ থেকে তার সহযোদ্ধারা বিচ্যুত হবেন না, গণজাগরণ মঞ্চের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা’।

বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। সারা দেশের মানুষ এবং দেশের বাইরের মানুষ তাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই বিচার আজ খুব ধীরগতিতে চলছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে গিয়ে যারা খুন হয়েছেন, তাদের হত্যার বিচার আজ আরও বেশি ধীরগতিতে চলছে’।

রাজিব হায়দার হত্যা মামলার রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে শুধু রাজিবের হত্যার বিচারই হয়েছে। এ বিচার করতে সময় লেগেছে তিন বছর। তিন বছর পর যে বিচার আমরা পেয়েছি, সে বিচার আমার কাছে ‘প্রহসনের বিচার’ বলে মনে হয়েছে। যে সাতজন খুনি সরাসরি রাজিবকে হত্যায় জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। কারো দুই বছর, কারো তিন বছর, কারো পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। অথচ সবাই রাজিবের হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন’।

রাজিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে গ্রেফতারে প্রশাসনের ব্যর্থতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই রানা রাজিব হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় হত্যাকাণ্ডেও তিনি জড়িত ছিলেন। অথচ এখনো তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। যতোদিন রাজিব হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শিবির নেতা রানাকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করা না যাবে, ততোদিন কোনো ব্লগার-লেখক হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করা সম্ভব হবে না’।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিচার সুষ্ঠু হচ্ছে না অভিযোগ করে সমাবেশে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘আজ বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হচ্ছে কি-না, সে বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই আমরা দেখেছি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে তার চিফ প্রসিকিউটর একজন আইনজীবীর অব্যাহতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন, যে আইনজীবী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করছিলেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, সরষের ভেতরেই ভুত রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এ দেশের জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল’।

‘আমরা আশা করি, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং এই বিচার চাইতে গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে যেসব তরুণ শহীদ হয়েছেন, তাদের হত্যাকারীদের বিচার সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে, যাতে করে আমাদের আর কোনো আন্দোলনে যেতে না হয়। না হলে জনতার আদালত থেকে কেউ ছাড় পাবেন না এবং এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পর্কিতদেরই নিতে হবে’।

ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত রাজিব হায়দারের সঙ্গেই বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে মন্তব্য করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘রাজিব হায়দার এবং জাফর মুন্সীর হত্যাকাণ্ডের তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ তিন বছরে আমাদের আরো অনেক সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।

২০১৫ সালেই আমাদের ৫ জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশব্যাপী অন্তত বিশজন সহযোদ্ধাকে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। যে রাজিব হায়দার শোভন ন্যায়বিচারের দাবিতে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন, প্ল্যাকার্ড লিখেছেন, আমি মনে করি, বিচারের নামে তার সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রহসন হয়েছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘যে সাতজন খুনি নিজেরা স্বীকার করেছেন, বর্ণনা করেছেন- কিভাবে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাদের দেওয়া হয়েছে লঘুদণ্ড। রাজিব হায়দারসহ যে বিশজনের বেশি সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে তারা কেউই কোনো ব্যক্তিগত দাবি নিয়ে রাজপথে আসেননি। তারা দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি নিয়ে এসেছিলেন। অথচ তাদের সঙ্গেই বিচারের নামে প্রহসন করা হলো’।

শহীদ সহযোদ্ধাদের আদর্শের বাংলাদেশ গড়তে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।