পাথরঘাটা (বরগুনা): শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা স্কুল প্রাঙ্গণে থাকবে একটি সুন্দর শহীদ মিনার। ৫২’র ভাষা শহীদদের স্মরণে সেই শহীদ মিনারে ছোট্ট হাতে ছোয়া ফুল রেখে শ্রদ্ধা জানাবে খুদে এ শিক্ষার্থীরা।
দিন যায়, মাস যায়, বছরও। তবুও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষকদের এ ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।
উপজেলার যে কয়েকটি স্কুল-কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে, তাও হতশ্রী ও ভাঙাচোরা টাইপের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের কথা। কিন্তু পাথরঘাটায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই স্থায়ী শহীদ মিনার।
ফলে বাধ্যবাধকতা থাকায় শহীদ মিনারহীন স্কুলগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারির আগে তৈরি করা হয় কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ ও কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার।
২১ ফেব্রুয়ারির সকালে ওই শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
এদিকে, স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচিও পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে একুশের চেতনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, উপজেলায় ১৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা ৪৭টি ও কলেজ ৫টি রয়েছে। এরমধ্যে কলেজগুলো ও হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে।
উপজেলার ৩৫নং কালমেঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জানায়, তার স্কুলে শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারিতে পাশের কালমেঘা মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে তাদের স্কুলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পুর্ব কালমেঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. রানা জানায়, স্কুলে শহীদ মিনার নেই। তাই তারা ওইদিন স্কুলে যায় না। বাড়ির পাশে বড় ভাইদের তৈরি কলাগাছের শহীদ মিনারে ফুল দেয় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনের। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় যেমন শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি, তেমনি স্কুলে দিবসটি পালনও হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবস পালনের বাধ্যবাধকতার জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পরিপত্র দেওয়া আছে।
তবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই বলে তিনি জানান।
তবে স্থানীয়দের দাবি, সব না হোক অন্তত বড় স্কুলগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। তাহলে তারা অন্তত কলাগাছের শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসআর