ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হাওরের দিন-রাত

শিক্ষার সুযোগ নেই নিকলীর কাশিপুরে

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
শিক্ষার সুযোগ নেই নিকলীর কাশিপুরে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: হাওর। বিচিত্র পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর এক অনন্য জনপদ।

এ জনপদের জীবন সংগ্রামের গল্পটা দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্ন। কখনো পানিতে ভেসে, কখনো খরায় পুড়ে জীবন চলে হাওরের বাসিন্দাদের। স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠাঁই, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ এদের বেশিরভাগের কাছে স্বপ্নের মতো। কিশোরগঞ্জে হাওর উপজেলা নিকলীর তেমনি এক সংগ্রামী জনপদের যাপিত জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন কিশোরগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট টিটু দাস। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

আমরার এইখানে ইস্কুল নাই, লেহাপড়া করমু কেমনে? তাই গাং (নদী) থাইক্যা মাছ ধইরা বাড়ি বাড়ি ঘুইরা মাছ বেচি। মাছের খাঁচা মাথায় নিয়ে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিল নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের কাশিপুরের মোবারক মিয়া (১২) নামে এক কিশোর।

মোবারক মিয়া আরও বলে, আমরা চার ভাই, এক বোন। কেউই লেহাপড়া করি না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা জাগে লেহাপড়া করতে। মাছ বেচতে ভাল্লাগে না।

শুধু মোবারক নয় কাশিপুরের অস্থায়ী ২৫০টি পরিবারের হাতে গোনা কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ছাড়া সবাই অক্ষরজ্ঞানহীন।

জানা যায়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় সমতল ভূমির সঙ্গে মিশে যায় কাশিপুর গ্রাম। তারপর থেকে এই গ্রামের ২৫০ পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। তারপর থেকে সমতল ভূমিতে প্রতি বছর সাত মাস অস্থায়ীভাবে প্রায় ২৫০টি পরিবার বসবাস করে কাশিপুরে। লোক সংখ্যা প্রায় ২২০০ হাজার। ২৭ বছর ধরে অন্ধকারেই তাদের পথ চলা। তারপরও তারা স্বপ্ন দেখে, স্থায়ীভাবে নির্মিত হবে কাশিপুর গ্রাম, এখানে স্কুল হবে। লেখাপড়া শিখবে শিশুরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাদের স্বপ্নই থেকে যায়। তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

স্থানীয়রা জানান, কাশিপুরের শিশুরা (আট/নয় বছর পর্যন্ত) সকাল হলে মাঠে ছুটে খেলার জন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলতে খেলতেই কেটে যায়।
আর ১০/১২ বছরের শিশুদের কেউ মাঠে গরু চরিয়ে, আবার কেউ মাছ ধরে, কেউবা অন্যের ফসলি জমিতে কাজ করে সংসারে অবদান রাখে। এভাবেই কাটে এখানকার শিশুদের শৈশব।   

কয়েকজন অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, ভাই মিডিয়ায় লেখেন। তাতে যদি সরকার আমরার দিকে একটু চায়! আমরা তো লেহাপড়া করতে পারি নাই, আমরার পোলাপানগো (ছেলে-মেয়ে) যেন একটা ব্যবস্থা হয়।

অনিক (৮), সালমান (৭), রাজু মিয়া (১০) নামে তিন শিশু বাংলানিউজকে জানায়, সারাদিন গরু রাখতে বা মাছ ধরতে তাদের আর ভালো লাগে না। তারা লেখাপড়া করতে চায়।

গ্রামটি স্থায়ী করে একটা স্কুল করার দাবি তাদের।

সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বছরের সাত মাস অস্থায়ীভাবে প্রায় ২৫০টি পরিবার বসবাস করে কাশিপুরে। বাকি সময় গ্রামটি থাকে পানির নিচে। এসময় এই গ্রামের বাসিন্দাদের থাকতে হয় আশপাশের কোনো গ্রামে।

কাশিপুর গ্রামটি স্থায়ী না হওয়ায় স্কুল হয় না। তবে গ্রামটি উঁচু করে স্থায়ী করা হলে স্কুল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।