ঢাকা: প্রত্নতত্ত্ববিদ, অনুবাদক, ইতিহাসবিদ, পুঁথি বিশারদ ও নৃবিজ্ঞানী আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এ শোক জানান।
বিবৃতিতে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির শিলালিপি সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি মরহুম যাকারিয়ার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে আবুল কালাম যাকারিয়ার গবেষণা কার্যক্রম দেশকে প্রভূত সাহায্য করেছে। তার মতো নির্মোহ, নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষ কমই দেখেছি। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন জ্ঞান সাধক ছিলেন।
‘তিনি ছিলেন আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎস। তার মৃত্যুতে জ্ঞান অন্বেষণের কাজে গভীর শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সহজে পূরণ হবার নয়। ’
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন প্রত্নস্থল পরিদর্শন, গবেষণা তত্ত্বাবধান, শিলালিপি সম্পাদনাসহ ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া প্রায় সাত বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
‘সম্পাদকমণ্ডলীর ৬৮টি বৈঠকের মধ্যে ৬৬টি বৈঠকেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি বৈঠকেই তিনি সবার আগে উপস্থিত হতেন এবং সবার শেষে যেতেন,’ বলেন তিনি।
বিবৃতিতে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক জানান, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে ঢাকার প্রাচীন শিলালিপি বিষয়ক দু’টি গ্রন্থের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিলালিপি বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়নের এই কাজটি তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ বলে বিবেচিত হবে।
১৯১৮ সালের ১ অক্টোবর বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামে জন্ম নেন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া।
ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষাজীবন শেষে বগুড়া আযিজুল হক কলেজে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৪৭ সালে তিনি ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে দেশের নানা প্রান্তে প্রত্নসম্পদের অনুসন্ধান এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন আ ক ম যাকারিয়া।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশের প্রথম শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া দেশের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর দিনাজপুর মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা। তার অধিকাংশ গ্রন্থই অপ্রকাশিত। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, বাংলা সাহিত্যে গাজী কালু ও চম্পাবতী উপাখ্যান, গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস, কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, তবাকাত-ই-নাসিরী, সিয়ার-উল-মুতাখ্খিরিন, বাংলাদেশের নৃতত্ত্ব উল্লেখযোগ্য।
বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক. বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বুধবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আ ক ম যাকারিয়া। বিকেলে কলাবাগান লেক সার্কাসে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঞ্ছারামপুরের দরিকান্দি গ্রামে দ্বিতীয় জানাজার পর আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়াকে সমাহিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এমএ/