ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মধ্যপাড়া খনিতে চীন ও রাশিয়া থেকে আসছে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
মধ্যপাড়া খনিতে চীন ও রাশিয়া থেকে আসছে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট খনির পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ (মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট) নিয়ে চীন ও রাশিয়া থেকে দু’টি জাহাজ বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছে।

পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত মেইন ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে চীনা জাহাজটির ২৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা।

এ যন্ত্রপাতি আনার পর তা খনি ভূ-গর্ভে বসিয়ে মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে পুনরায় পাথর উত্তোলন শুরু করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অর্থাভাবে বিদেশ থেকে সময়মতো প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট আমদানি করতে না পারায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া ও চীন থেকে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার ৩৪টি প্রোফর্মায় অন্তর্ভুক্ত শতাধিক আইটেমের মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট আমদানি করা হচ্ছে। মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন এজেন্ট সিঙ্গাপুরের জিওকেম কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা গেল জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাশিয়া ও চীনে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে তা পরিদর্শন করে ক্লিয়ারেন্স দেয়।

জিওকেম কোম্পানির ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি যন্ত্রপাতিগুলো জাহাজিকরণ শুরু করে। পাথর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মেইন ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে চীনের জিয়াং জিয়াং সমুদ্র বন্দর থেকে একটি জাহাজ ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের পথে রওনা দিয়েছে। রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ান সমুদ্র বন্দর থেকে অপর জাহাজটি রওনা দিয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি।

চীনা জাহাজটি ২৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে জাহাজ থেকে ইক্যুইপমেন্ট খালাস করে মধ্যপাড়ায় নিয়ে আসতে তিন/চারদিন সময় লাগবে। এরপর খনি ভূ-গর্ভে ইক্যুইপমেন্ট নামিয়ে বিভিন্ন স্থানে সেট করে স্টোপ উন্নয়ন করার পর পাথর উত্তোলনে যেতে আরও ২০/২৫ দিন সময় লাগবে বলে সূত্র জানায়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাবেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, শিগগিরই বিদেশ থেকে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট খনিতে চলে আসবে। যন্ত্রপাতি এলে যতো দ্রুত সম্ভব পাথর উত্তোলন শুরু করা হবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি খনিতে আসার কথা। যন্ত্রপাতি এলে পাথর উত্তোলন শুরু হবে।

খনির মহাব্যবস্থাপক (জিএম-প্রশাসন ও বিপণন) নেয়াজুর রহমান জানান, বর্তমানে খনি ইয়ার্ডে কোনো পাথর নেই। মজুদ পাথর জানুয়ারি মাসেই বিক্রি হয়ে গেছে। পাথর না থাকায় বিক্রি বন্ধ। তবে প্রায় দেড় লাখ টনের মতো ডাস্ট (পাথরের গুড়া) মজুদ রয়েছে। অত্যন্ত ধীর গতিতে তা বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মধ্যপাড়া খনির পাথর উত্তোলন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেডকে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। জিটিসি ১৭১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ছয় বছরে ৯২ লাখ টন পাথর উত্তোলন করবে। জিটিসি ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদন শুরুর ছয় মাসের মধ্যে খনিতে তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে আসছিল। খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়নের জন্য উৎপাদন সহায়ক প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে আসছিল জিটিসি। কিন্তু অর্থ সংকটে সময় মতো তা আমদানি করতে পারেনি খনি কর্তৃপক্ষ।

যন্ত্রপাতির অভাবে খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট প্রতিদিন তিন শিফটের জায়গায় দু’টি শিফট বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জিটিসির অধীনে খনিতে কর্মরত প্রায় এক হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয় এবং ৭০ জন বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তা নিজ নিজ দেশে ফিরে যান।

এ অবস্থায় খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে মধ্যপাড়া খনিকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেয়। পেট্রোবাংলার ঋণ পাওয়ার পর খনি ভূ-গর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন ও উৎপাদন সহায়ক অতি প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অগ্রণী ব্যাংক কাওরান বাজার (ঢাকা) শাখায় এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়। এলসি খোলার পরপরই মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদনকারী চীন ও রাশিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের জন্য অর্ডার দেয় জিটিসি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।