ঢাকা: মাইজদীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, মৌমাছি কচি কাঁচারমেলা, বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব চত্বর দখল করে বাণিজ্যিক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় বসবাসরত নোয়াখালীর সংস্কৃতিকর্মী, লেখক ও সাংবাদিকরা।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তারা এ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন তারা।
বিবৃতিদাতারা হলেন- কবি মোস্তফা ইকবাল, টিভি নাট্যকার ও গল্পকার মিরণ মহিউদ্দীন, কবি ও লেখক রিয়াসাত আল ওয়াসিফ রঞ্জন, কবি ও গল্পকার প্রত্যয় জসীম, গণজাগরণমঞ্চ কর্মী ও আবৃত্তিকার ডমিনিক ক্যাডেট, টিভি নাট্যকার পরিচালক ও চলচ্চিত্রকার সাজ্জাদ রাহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক, কলাম লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী হাবীব ইমন, ঢাকাস্থ নোয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক সাংবাদিক মশিউর রহমান রুবেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তফা মনোয়ার সুজন, সাংবাদিক জাহিদুর রহমান, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ তারেক চৌধুরী, কণ্ঠশিল্পী ঐশী, শাওন কায়সার, সাপ্তাহিক নোয়াখালী কথার সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন, কবি শহীদুল ইসলাম মুকুল, টিভি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মো. নোমান, নাট্যকর্মী মো. জোবায়ের রুবেল, সংস্কৃতি কর্মী ও সংগঠক শিহাব মাহমুদ, কণ্ঠশিল্পী তনু রানী কর, চিত্রশিল্পী মশিউর রহমান পলাশ, সংস্কৃতিকর্মী তাহমিনা তাবাসসুম রূপা, কণ্ঠশিল্পী রাবিতা সাবাহ, টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা মোরশেদুর রহমান, সংস্কৃতি কর্মী নাহিদ রহমান ও সুবল দেবনাথ।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাচীর ঘেরা পার্কটি নির্মাণের মাধ্যমে শহরের প্রতিবেশ কাঠামো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে; যা জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে হুমকির মধ্যে ফেলবে। পাশাপাশি কোনোরূপ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জামায়াত সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানির বাণিজ্যিক পার্ক তৈরির নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, মুক্তমঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব বন্ধ সংকুচিত করা স্বাধীনতা বিরোধীদের দীর্ঘ চক্রান্তের অংশ।
এতে আরও বলা হয়, নোয়াখালী শহরের ঐতিহ্যবাহী বড় দীঘির দক্ষিণ পাড় গত কয়েক দশক থেকে স্থানীয় শিল্প-সাহিত্য-মুক্তবুদ্ধি চর্চার চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন, জঙ্গিবাদবিরোধীসহ সব আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু এই চত্বর। এ স্থানটি শহরের একমাত্র মুক্ত এলাকা এবং দীঘিটির পাড়ে প্রায় পঁচিশ বছর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব আয়োজন হয়ে আসছে। পাশাপাশি শহরের নাগরিকদের জন্য এই পার্কটি একমাত্র বৈকালিক ভ্রমণের মুক্ত জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার শুরু থেকে স্বাধীনতাবিরোধী বারবার এই মেলা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়েও পারেনি। কিন্তু, বর্তমানে পার্ক নির্মাণের নামে জামায়াত তাদের দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তের অংশ হিসেবে জায়গাটি হাতিয়ে নিতে চায়। ইতোমধ্যে জেলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং মামলাটি চলমান থাকলেও পৌরসভা আইনের পরোয়া না করে পার্ক নির্মাণের কাজ করছে।
বিবৃতিদাতারা উপর্যুক্ত স্থানে পার্কের সংস্কার ও শিশুপার্ক তৈরি করা পক্ষে। তবে তারা চান সেটি হোক উন্মুক্ত, সরকারি এবং অবাণিজ্যিক।
কিন্তু এই বেসরকারি পার্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ, বিজয় মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, বইমেলা, বৈশাখী উৎসব বন্ধ করার পায়তারা চলছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ জানান তারা।
অনতিবিলম্বে এই বেসরকারি পার্ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করে, জনগণের জন্য উন্মুক্ত এবং অবাণিজ্যিক, সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশগম্য পার্ক তৈরির আহ্বান জানান বিবৃতিদাতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
এইচএ/