ঢাকা: দেশের তিন জেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনে শতকরা ২৫ ভাগ বাল্যবিয়ে কমেছে। বেড়েছে মেয়েদের জনসচেতনতা ও নানা বিষয়ে দক্ষতা।
নড়াইল, সাতক্ষীরা ও খুলনা এ তিন জেলার নয় হাজার মেয়েদের ওপর বিভিন্ন কাযর্ক্রম সম্পাদনে এসব সফলতা পাওয়া গেছে।
বুধবার (০২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে পপুলেশন কাউন্সিল’র বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর লাইফ স্কিলস, ইনকাম অ্যান্ড নলেজ ফর অ্যাডোলেসসেন্ট গার্লস জেনারেটিং এভিডেন্স টু ডিলে ম্যারিজ (বালিকা) প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানানো হয়।
যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে থাকে সেসব জেলার মধ্য এ তিন জেলা অন্যতম। বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহযোগিতায় এ প্রকল্প পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কেন এ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেশে বাল্যবিবাহ নির্মূল করার লক্ষ্যে গবেষণার ফলাফল এবং করণীয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয় অনুষ্ঠানে।
গবেষণায় ওঠে এসেছে, সঠিক বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে হলে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, উপযুক্ত চাকরি না পাওয়া, নির্যাতন ও হয়রানির স্বীকার হওয়া। এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী যাদের আগে বিয়ে হয় তারাও সামাজিকভাবে একাকীত্ব ও দারিদ্র্যতায় ভোগেন।
‘বালিকা’ প্রকল্পে ৭২টি কমিউনিটির নয় হাজারের বেশি নারী অংশগ্রহণ করেন। কমিউনিটিগুলোকে তিনটি দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মধ্যে একটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যেখানে মেয়েরা গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ার মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা লাভ করেছে।
এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা সব মেয়ে, প্রশিক্ষক এবং সঙ্গীদের সঙ্গে নিরাপদ, মেয়েবান্ধব জায়গা যা বালিকা সেন্টার নামে পরিচিত সেখানে প্রতি সপ্তাহে মিলিত হয়েছে। যা মেয়েদেরকে নতুন বন্ধু বানাতে, বই ধার করতে এবং কিশোরী থেকে যুবতী হয়ে উঠতে যে দক্ষতাগুলো থাকা প্রয়োজন তা অর্জন করতে সাহায্য করেছে।
এর ফলে মেয়েরা তাদের কমিউনিটির মধ্যে দক্ষতাগুলো চর্চা করেছে যা, তাদেরকে আত্মবিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি অর্জনগুলো প্রকাশ ও পরিচিতি উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
প্রকল্পের ফলাফলে দেখা গেছে, বালিকা’র প্রকল্প বাস্তবায়িত এলাকায় বাল্যবিবাহের হার শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত কমেছে। আর যে কমিউনিটিতে মেয়েরা শিক্ষায় সহযোগিতা লাভ করেছে সেখানকার মেয়েদের সমাপনী জরিপে কন্ট্রোল কমিউনিটির চেয়ে শতকরা ২৩ ভাগ কম বিয়ে হয়েছে।
যেখানে জেন্ডার বিষয়ক অধিকার ও আপস-আলোচনা, কোনোকিছু গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে পারা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতাবৃদ্ধির জীবনদক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ লাভ করেছে, সেখানে শতকরা ২৪ ভাগ কম বিয়ে হয়েছে।
এছাড়া যে কমিউনিটিতে মেয়েরা উদ্যোক্তা হওয়া, মোবাইল ফোন মেরামত করা, ছবি তোলা ও প্রাথমিক চিকিৎসার জীবনমুখী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, তাদের সমাপনী জরিপে কন্ট্রোল কমিউনিটির চেয়ে শতকরা ২২ ভাগ কম বিয়ে হয়েছে।
এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা মেয়েদের স্কুলে অংশগ্রহণের হার শতকরা ১৮ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা এবং জেন্ডার বিষয়ক অধিকার বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ফলে তাদের গাণিতিক দক্ষতা শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে।
জেন্ডার বিষয়ক অধিকার বৃদ্ধি এবং জীবনমুখী দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে তাদের আয় রোজগার করার হার প্রায় তিনগুণ বেশি।
প্রকল্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি এমন একটি বিশেষায়িত গবেষণা যেখানে শুধুমাত্র যারা বালিকা প্রকল্পের ইন্টারভেনশন পেয়েছে তারাই নয় বরং এ গবেষণার ফলাফলে কমিউনিটির সব মেয়েই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পপুলেশন কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট এবং বালিকা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. সাজেদা আমিন বলেন, আমরা যদি কার্যকরভাবে বাল্যবিবাহের হার কমাতে চাই তাহলে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যা মেয়েদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে এবং তার পরিবার ও কমিউনিটিকে প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করবে। যেন মেয়েরা সমাজের জন্য বোঝা নয় বরং সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বালিকা প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং বালিকা সেন্টারগুলো কমিউনিটির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি, শিক্ষক এবং মেন্টরদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
শুরুতে পপুলেশন কাউন্সিলের ‘বালিকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে যে সফলতা পাওয়া যায় তার চিত্র তুলে ধরেন পপুলেশন কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট এবং বালিকা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. সাজেদা আমিন। এতে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন’র সম্বয়কারী সিমেন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ’র প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেইগবেদার, দ্য অ্যাম্বাসি অব দ্য কিংডম নেদারল্যান্ডস, ঢাকা বাংলাদেশ’র ডেপুটি হেড অব মিশন মার্টিন ভ্যান হুগস্ট্রেটিন প্রমুখ।
একটি প্রামাণ্য চিত্রও দেখানো হয়। এছাড়া ওই তিন জেলার সুবিধাভোগী কয়েকজন বালিকার মতামত ও অভিজ্ঞতাও তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৬
একে/জেডএস
** শিশু নির্যাতনের ধরন বদলেছে