ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বল এখন ভারতের কোর্টে

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
বল এখন ভারতের কোর্টে ড. গওহর রিজভী

ঢাকা: তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি ভারতের জন্যই আটকে আছে- এমন ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, বল এখন ভারতের কোর্টে। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সম্মত খসড়াও প্রস্তুত আছে।

তাই নতুন করে আলোচনারও প্রয়োজন নেই।

শনিবার (০৫ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংলাপ অনুষ্ঠানের একটি পর্বে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভারত সরকারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আগের চেয়ে হত্যার সংখ্যা কমেছে। কিন্তু এরপরও একটি হত্যাও অনেক বেশি। আর এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ধাপে ধাপে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে গওহর রিজভী বলেন, এর প্রভাব অনেক সুদূরপ্রসারী। ইতিবাচক যে সাফল্য এসেছে তার চেয়েও অনেক বেশি এখনও আসা বাকি।

আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিস্তা চুক্তি কবে নাগাদ স্বাক্ষর হবে জানতে চাইলে গওহর রিজভী বলেন, অবশ্যই আমরা সবাই জানতে চাই, কখন চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে। আর সম্ভাব্য দিন-তারিখ অনুমান করা বা এ বিষয়ে ধারণা দেওয়া আমার জন্য ফাঁদে পড়ার মতো বিষয় হবে, যা আমি চাই না।

তিনি বলেন, তবে আমি বলতে চাই, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে এটি হবে, শিগগিরই হবে। আমাদের চুক্তি (চুক্তির সম্মত খসড়া) এখনও বহাল আছে। নতুন কোনো চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে না। চুক্তি প্রস্তুত। তাই এটি সময়ের ব্যাপার এবং বল এখন ভারতের কোর্টে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সপ্তম বারের মতো এ সংলাপের আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী সংলাপ অনুষ্ঠান শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

দিনভর অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে আলোচকরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়া, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক সংযোগ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।

শনিবার সন্ধ্যায় একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) শ্রিপ্রয়া রঙ্গনাথানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশিদের ভারতীয় যে ভিসা দেওয়া হয় তাতে কোন স্থলসীমান্ত দিয়ে তিনি যাতায়াত করতে পারবেন তা উল্লেখ থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতীয়দের যে ভিসা দিয়ে থাকে তা দিয়ে তারা যে কোনো সীমান্ত দিয়েই ঢুকতে পারেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) শ্রিপ্রয়া রঙ্গনাথান বলেন, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। দু’দেশের মধ্যে ভিসা ব্যবস্থা নিয়ে ২০১৩ সালে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে এ বিষয়টি ওঠেনি। ভিসা ব্যবস্থা চলমান প্রক্রিয়া এবং এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, শ্রিপ্রয়া রঙ্গনাথান ঠিকই বলেছেন। সংশোধিত ভিসা ব্যবস্থার খসড়া নিয়ে তিনিও কাজ করেছেন। তবে ওই ভিসা ব্যবস্থার মূল চেতনা ছিল নির্বিঘ্নে চলাচল। এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত।

গতকাল শুক্রবার দিনের প্রথম সেশনে সীমান্ত ও জনগণের নিরাপত্তা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক এম জে আকবর।

তিনি অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্ব দেন এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও সেগুলোকে আমলে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইঁদুরের তৈরি মাটির ঢিবি থেকে পাহাড় সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কিছুরই একটি বড় ইস্যু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। ’

তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা রয়েছে। বিশ্বাস থাকলেই কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। ’

দু’দেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘ দিনের ঝুলে থাকা সমস্যা নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর সমাধান হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এম জে আকবর বলেন, ‘তবে নতুন সুযোগ আসছে। যা একসময় অচিন্তনীয় ছিল তা এখন সম্ভব হচ্ছে। ’

আলোচনা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, আইসিএলডিএসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক ক্যাপ্টেন অলক বানসাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান মুনশি ফয়েজ আহমেদ, নয়াদিল্লিস্থ সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক শক্তি সিনহা, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক বিনোদ বাউরি, ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিক্মের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।