ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তারামন বিবির নিঃশ্বাসে ভরসা অক্সিজেন সিলিন্ডার!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
তারামন বিবির নিঃশ্বাসে ভরসা অক্সিজেন সিলিন্ডার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম / ফাইল ফটো

ময়মনসিংহ: তিনদিন আগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে রংপুরের কুড়িগ্রামের রাজিবপুর কাচারিপাড়া’র বাড়িতে ফিরেছেন তারামন বিবি বীর প্রতীক। তবে এখনো শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে তার মুক্তি মেলেনি।

 
   
বেঁচে থাকতেই জাতির এ বীর কন্যাকে দিন-রাত সঙ্গী করতে হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। এটি ছাড়া স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না। এজন্য স্থানীয় রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনা হয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার।

বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ীভাবে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের। হাসপাতাল ছাড়ার আগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য আবেদন করেছিলেন। এখন সেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছেন বীর প্রতীক তারামন।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে এসব তথ্য জানান মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াই করে বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া তারামন বিবি’র ছেলে আবু তাহের। এ সময় তিনি আবারো তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।

বাড়িতে ফেরার পর গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আবারো শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তারামন বিবির। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ছুটিতে আসা এক চিকিৎসকের পরামর্শে বুধবার রাতে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এরপর শ্বাসকষ্ট ও কাশি কিছুটা কমেছে জানান ছেলে আবু তাহের।

বলেন, মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা অক্সিজেন সিলিন্ডার। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অক্সিজেন খুলে রাখলেই মা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সার্বক্ষণিক মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কখন কী হয় বুঝতে পারছি না।

তারামন বিবি বাঁচতে চান। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া স্বাভাবিক উপায়ে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে চান। গলা ধরা কণ্ঠে আবু তাহের বলেন, ‘মা প্রায় সময়েই কান্নাকাটি করেন। ভাবেন শেষ হয়ে যাচ্ছেন। তার দম যায় যায় অবস্থা’।

তারামন বিবির চিকিৎসায় সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপে সন্তুষ্ট তার পরিবার। আবু তাহের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসায় সরকার যে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করালে মা সুস্থ হয়ে উঠতো’।

বীর কন্যা তারামন বিবিরও আকুতি এমন- ‘সরকার আমাকে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান দিয়েছে। দেশেও আমার চিকিৎসা করিয়েছে। এখন আমার শেষ ইচ্ছা যেন বিদেশ পাঠিয়ে আমার চিকিৎসা করানো হয়’।   

ফুসফুস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে শরীরের ওজনও কমেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা তারামন বিবির। তার ছেলে আবু তাহেরের ভাষ্যে, ‘মা অনেক শুকিয়ে গেছেন। ৩৫ কেজিতে গিয়ে ঠেকেছে তার ওজন। ’

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুরের কুড়িগ্রামের রাজিবপুর কাচারিপাড়া এলাকা থেকে শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতীক।

পরদিন মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার চিকিৎসায় ৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন পরেই আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তারামনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

** তারামন বিবি হাসপাতালে
** তারামন বিবির সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা!
** ময়মনসিংহ থেকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে তারামন বিবি
** জীবনযুদ্ধেও জিততে চান তারামন বিবি

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।