ঢাকা: এ শোক ভোলা যায় না, তবু বাঁচতে হয়। তাই জীবনে স্বাভাবিকতা আনার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছেন ‘পিলখানা ট্রাজেডি’র ভুক্তভোগীরা।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে বদলে যাওয়া জীবনে পুরনো ছন্দ সহসা ফিরবে না জেনেও সেনাস্বজনরা মনোবল ফেরানোর লড়াই করছেন। এ ৭টি বছর অবিরত তাদের পাশে সমব্যথী রয়েছে সরকার-সামরিক বাহিনীও।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ সামাজিক নিরাপত্তায় শহীদদের স্বজন, ক্ষতিগ্রস্তদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে যৌথ উদ্যোগে। প্রতিটি পরিবার যেন স্বচ্ছলভাবে স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন-যাপন করতে পারে, সে চেষ্টার অন্ত রাখা হচ্ছে না।
মিরপুর ডিওএইচএস-এ নবনির্মিত বহুতল ভবন ‘অপরাজিতা’। এখানে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার যার ঘরের মালিকানার চাবি হাতে পেয়েছেন তারা গত ৭ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ চাবি হস্তান্তর করেন। ভবনটি সেনাকল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় নির্মিত।
ঘটনার পরে বিলম্ব না করে এ পরিবারগুলোর আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। সেগুলোর অনেকগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে।
আইএসপিআর সূত্র ও প্রকাশিত সংবাদ থেকে পাওয়া যায়, প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান, ৫ লাখ টাকা করে সেনাবাহিনী কল্যাণ তহবিলের অনুদান, ৫০ হাজার টাকা করে বিডিআর তহবিলের অনুদান দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস প্রতি বছর প্রত্যেক পরিবারকে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানায়। শহীদ পরিবারগুলোকে দুই লাখ টাকা ট্রাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডে প্লেসমেন্ট শেয়ার দেওয়া হয়।
শহীদ পরিবারগুলো পাচ্ছে নিরাপত্তা প্রকল্প তহবিল, ডিএসওপি ফান্ড, কল্যাণ তহবিলের অনুদান। মৃত্যু আনুতোষিক, ছুটির পরিবর্তে নগদ অর্থ, কম্যুটেশন এবং মাসিক পেনশনও পেয়েছেন স্বজনরা।
শুধু তাই নয়, শহীদের স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যের চাকরি, শিক্ষার্থী সন্তানদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও বিনা বেতনে পড়ালেখার ব্যবস্থা, আবাসিক সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পিলখানায় শহীদ কর্নেল মোহাম্মদ আখতার হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম রীমা বাংলানিউজের সঙ্গে ফোনালাপে বলেন, ‘ভালো আছি আল্লাহর রহমতে। সরকার ও বাহিনী দেখাশোনা করছে। ’
এ দম্পতির তিন পুত্র- মো. ইমতিয়াজ হোসেন ফারাবী, মো. ফয়সাল হোসেন ফাহমী ও মো. আন্দালীব হোসেন ফারদিন। তাদের ভবিষ্যৎ গড়ায় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে হোসনে আরাকে।
অপর শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এলাহী মন্জুর চৌধুরীর স্ত্রী তান্নি ইয়াফতা চৌধুরী ফোনালাপে খুব সংক্ষেপে বলেন, ‘আছি, ভালোই আছি। ’
এ ক’টি বছর পেরিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি আবার ফিরেছে, তান্নির মনে ২০০৯ সালের সে দিনটির ভয়ংকর স্মৃতি তাজাই রয়ে গেছে। সেদিন প্রসঙ্গে কথা বলতে কষ্ট বাড়ে তার।
তান্নির সব মনোযোগ এখন দুই কন্যা- সারাহ জুমানা মন্জুর ও ফারাহ মন্জুর এবং পুত্র ফাইয়াজ মন্জুরকে ঘিরে।
এ পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ও নিয়মিত খোঁজ নেন সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওয়ালীউল্লাহ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ শোক কাটানো যায় না। সহযোগিতা স্বচ্ছলতা দেয়, কিন্তু স্বজন ভোলার কষ্ট ভুলিয়ে দেয় না। তবে সরকার ও বাহিনী তাদের চেষ্টা চালিয়েছে। ভুক্তভোগীদের জীবনে চলার পথে যা যা প্রয়োজন, তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ’
তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্বজনরা জানেন, দেশের প্রয়োজনে একদিন আত্মাহুতি দেবে প্রিয়জনটি। সেটি তারা মেনেও নেন। কিন্তু এখানে যে ঘটনা, তা মেনে নেওয়া সম্ভব হবে কি? যে বিডিআর দেশের সীমান্তে সবার আগে সুরক্ষা দেয়, তারাই দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের ভাইয়ের হত্যাকারী হবে- কে জানতো? এটা তাই ভোলা সম্ভব নয়। ’
শহীদের স্বজনদের জন্য সরকার ও বাহিনী থেকে বাসস্থান, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ব্যাংকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানি।
‘তবে একটা কথা মনে হয় প্রায়ই, বিডিআর সদস্যদের পরিবার ও স্বজনদের খবর রাখা প্রয়োজন। তারাও ভুক্তভোগী। তাদেরও দেখভাল করাও রাষ্ট্রের কাজ’- বলেন সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এসকেএস/জেডএম