ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চোখে অশ্রু, হাতে গোলাপ...

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
চোখে অশ্রু, হাতে গোলাপ... ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘কষ্ট বোঝানোর ভাষা নেই। যার হারিয়েছে সেই বোঝে!’ কান্নাচাপা কণ্ঠে একথা বললেন পিলখানায় নিহত এক সেনা কর্মকর্তার স্বজন সামন্তা সাদিয়া শারমিন।


 
তিনি বলেন, ‘ওইদিন তাকে (নিহত সেনা কর্মকর্তা) হয়তো আটকিয়ে রাখা হয়েছে কোয়াটার গার্ডে... দুইদিন তিনদিন সেই আশায়ই ছিলাম। যার যায় সে-ই বোঝে যাওয়ার কষ্ট কত!’

স্বজনহারানোর কষ্ট বয়ে চলা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা ফুল দিতে এসেছিলেন বনানী সামরিক কবরস্থানে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও  মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

শুরুতে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে সিনিয়র সচিব ড. মো মোজাম্মেল হক খান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, নৌ বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ যৌথভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিহত স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া পাঠ করেন।

হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পরও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মুখে শোকের ছায়া। তাদের চোখে অশ্রু আর হাতে গোলাপ। প্রিয়জনের কবরের উপর গোলাপ বিছিয়ে দিয়ে একে একে দাঁড়িয়ে থাকেন কবরের পাশে। তাদের কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ পিতা, কেউ বা ভাইকে।

স্বজনদের কেউ কেউ ছিলেন একেবারেই নির্বাক। কথা বলতে গেলেও তার মুখ দিয়ে বেরোয়নি একটিও শব্দ। শোকাচ্ছন্ন এই দিনটি যেন চির বেদনার।

ঘটনার দিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভার ক্যাম্পাসে ছিলেন তরুণ অ্যাডেভোকেট সাকিব রহমান। তার বাবা সেনা কর্মকর্তা কুদরতে এলাহী শহীদ ৫৭ জন সেনা সদস্যদের একজন।

সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিমুহূর্তে বাবাকে মনে পড়ে। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হোক বা অন্যকোনো ম‍ুহূর্ত। সাত বছর আগের ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পরের দশদিন ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দশ দিন। লাশ শনাক্ত থেকে শুরু করে লাশ দাফন পর্যন্ত ছিলো ওই দিনগুলো।

তিনি আরও বলেন, আমাকে পড়ালেখা করাতে আমার আম্মুকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখনও তিনি চাকরি করছেন। দিন যাচ্ছে, এই দিনটা সবাই মনে করে। এছাড়া আর কোন দিন মনে করে না। বাবাকে হারানো পর গেল ৭ বছরের প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। সবাই সবার বাবাকে মিস করছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই দিনে রাজধানীর বর্তমানে বিজিবি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করেন বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।

একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। বিচারিক কাজ শেষে হত্যা মামলার রায় দেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত। বিস্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একই আদালতে চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এসএ/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।