ঢাকা: বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীরা বিচারের আওতায় আসবেন বলে আশা করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। একই সঙ্গে সেই সময়ের দুর্নীতি-অন্যায় নিয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
১/১১’র পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবিদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেই সময়কার ডিসিশন মেকিংয়ে যারা ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন ছিল মন্ত্রীর কাছে।
এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৫তম সংশোধনী পাস হওয়ার পরে অবৈধ ক্ষমতা দখল এবং সামরিক শাসন সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ ক্ষমতা দখলকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার গত সাত বছর ধরে দেশ শাসনে বঙ্গবন্ধুর খুনির বিচার, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, ২১ আগস্টের হামলার বিচারের তদন্ত সম্পন্ন করা- এসব ঘটনাগুলো হাতে নিয়েছে। যেহেতু অবৈধ ক্ষমতা দখল শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেহেতু একই সঙ্গে সামরিক শাসন ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা অথবা সংবিধান লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়টা নিয়ে এখন পর্যন্ত বিচার আচারের কোনো সূত্রপাত করতে পারিনি।
‘তবে যেহেতু ১৫তম সংশোধনীতে অবৈধ ক্ষমতা দখলটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেহেতু এটা বিচারযোগ্য। সুতরাং, অতীতে যেসব অবৈধ ক্ষমতা দখল ঘটে গেছে সেগুলো আজ হোক কাল হোক আমলে আসবে। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমলে আসছে’- বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ১/১১ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এ ব্যাপারটা আছে এবং যারা ১/১১’র সঙ্গে জড়িত, বিচার-আচার যখন শুরু হবে তখন তাদের (ডিসিশন মেকিং) দিয়েই শুরু হবে।
১/১১’র ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি-না- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ১/১১’র ঘটনা সংসদে আলোচনা লিপিবিদ্ধ করা হয়েছে। এখন মাহফুজ আনামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো বিষয়টা আলোচনায় এলো। এটা নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়নি। এই মুহূর্তে উন্নয়ন, জঙ্গি তাণ্ডব, নাশকতা অন্তর্ঘাত বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করছি, আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলা করেছি, আর যাতে আগুন সন্ত্রাস না হয় তার ব্যবস্থা করছি।
‘সুতরাং কমিশনের যে প্রস্তাব সেটা বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপিত হয়েছে, সরকার এটা শুনেছে। সরকার পরে এটা ভেবে চিন্তে দেখবে। ’
তিনি বলেন, ‘৭৫ থেকে বিভিন্ন সামরিক শাসনকালে দুস্কর্ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতন, অত্যাচার-দুর্নীতির যেসব ঘটনা ঘটেছে, সামগ্রিক ব্যাপারে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি রাখে। তারপর বিচার আচার কী হবে সেটা সরকার দেখবে। কিন্তু এ ধরনের একটা শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি রাখে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সম্পর্কে প্রতিহিংসার কথা বলেননি বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, প্রধানমন্ত্রী অক্ষরে অক্ষরে সত্য কথা বলেছেন। যাতে আর কোনো দিন ১/১১ না ঘটে। সেটি সতর্ক করে উচ্চারণ করেছেন’।
বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা স্মরণকালের সবচেয়ে স্বাধীনতা ভোগ করছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনায় একচুলও ছাড় দেয় না।
সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইএফজে এবং হিউম্যান রাইটওয়াচের প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা একচোখা বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন হত্যা-নির্যাতন, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চুপ থেকেছে, দায়সারা মন্তব্য করেছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে খুনের পর সামরিক শাসনামলেও নীরবতা পালন করে।
‘সামরিক শাসনামলে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হলেও নীরবতা পালন করেছে তারা। খালেদার আগুন সন্ত্রাসের সময়ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিলো না, টু শব্দটি করেনি একচোখা সংস্থা’।
জাতীয় সংসদ নিয়ে টিআইবি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা সঠিক নয় দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলনে, টিআইবি মিথ্যা প্রচার করেছিল, উত্তর দিতে পারেনি। জাতীয় সংসদকে বলতে পারে না, যে দুর্নীতির আঁখড়া।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর
** মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে না সরকার