ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মুজিবনগরে শিলা বৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
মুজিবনগরে শিলা বৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেহেরপুর: মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শিলা বৃষ্টির আঘাতে মাটির সঙ্গে নুইয়ে পড়েছে উঠতি ফসল গম, মসুর, ভূট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি।

ঝরে পড়েছে সজনে ও আমের মুকুল। কোনো কোনো বাগানে আম গাছের ডালপালাও ভেঙে পড়েছে।

এদিকে ফসলের পাশাপাশি কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরের দেয়াল ভেঙে গেছে, উড়ে গেছে ছাউনি।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৯টার দিকে হঠাৎ শুরু হওয়া এ শিলা বৃষ্টি সাত/আট মিনিট স্থায়ী হয়।

মানিকনগর গ্রামের চাষি ইউনুছ আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। শিলা বৃষ্টির কারণে সব পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাষি আবুল হোসেনের ১১ বিঘা জমির পেঁয়াজের পুরোটাই ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলেও জানালেন তিনি।

আনন্দবাস গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান ও রফাতুল্লাহ বলেন, শিলা বৃষ্টিতে মাঠের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রফাতুল্লার চার বিঘা জমির মসুর, ফজলুর রহমানের সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গম রয়েছে। রফাতুল্লাহ বলেন, জমি থেকে মসুর ওঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ শিলা বৃষ্টির কারণে মসুরের সব ফল ঝরে গেছে। এটাই ছিলো আমার একমাত্র ফসল।

ভবেরপাড়া গ্রামের কৃষক আমানত আলী জানান, শিলা বৃষ্টিতে গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে গেছে। মাঠের সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা সহজেই এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন না।

মানিকনগর গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে এ ধরনের শিলা বৃষ্টি আমরা দেখিনি।
সোনাপুর মাঝের গ্রামের কৃষক সারা আলী ও নাজিরাকোন গ্রামের রমজান আলী বলেন, ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আমাদের মাঠের সব ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। মাঠ থেকে ফসল আর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো না। এ ধরনের ঝড় ও শিলা বৃষ্টি বিগত ২৫/৩০ বছরেও দেখেনি বলে তারা উল্লেখ করেন।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলায় এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, ৭১ হেক্টর জমিতে রসুন, এক হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে গম, ৭৮০ হেক্টর জমিতে মসুর, তিন হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে ধান, এক হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা ও ৪শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোফাখখারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ভবেরপাড়া, নাজিরাকোনা, সোনাপুর, মাঝপাড়া, মানিকনগর ও আনন্দবাস গ্রামের উপর দিয়েই ঝড় ও শিলা বৃষ্টি বেশি হয়েছে। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ শিলা বৃষ্টিতে ২শ’ হেক্টর জমির পেঁয়াজের শতকরা ১০.৪৭ শতাংশ, ১৩৫ হেক্টর জমির ৯ শতাংশ গম, ৮৪ হেক্টর জমির ১০.৭৬ শতাংশ মসুর, ৩০ হেক্টর জমির ২.৯১ শতাংশ ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সবজি খেতের অধিকাংশ সবজিই উঠিয়ে ফেলায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।

এক্ষেত্রে কৃষকদের জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সেচে ফেলা এবং ফসলগুলোতে ব্যাপক পরিচর্যার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে।
 
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এ উপজেলায় শিলা বৃষ্টিতে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেদিনের সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য চাষিরা তাদের খেত পরিচর্যা করলেও আবারো শিলা বৃষ্টিতে খেতের সব ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।