ঢাকা: আলোচিত ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার চার মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ ধরতে পারেনি প্রধান আসামি ও ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলকে।
পুলিশের খাতায় এখনও পলাতক সোহেল।
তার ভাষ্য, ‘সোহেল পলাতক তাই তাকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। খুঁজে পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। ’
অথচ রিয়াদের পরিবারের অভিযোগ, প্রধান আসামি সোহেল তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত বসছেন এবং বীরদর্পে পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ধর্ণাঢ্য ও প্রভাবশালী হওয়ায় সোহেল মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছেন। এ কারণে মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলেও অভিযোগ রিয়াদের পরিবারের।
এ কারণে রিয়াদ হত্যার প্রধান আসামিকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে তার পরিবার।
নিহত রিয়াদের বড় ভাই ও মামলার বাদী রিপন হোসেন বলেন, ‘হত্যার পর সোহেল হুমকি দিয়েছিল। সেই সময় ঢাকায় গিয়ে মামলা তুলে নিয়ে আপস করতেও বলেছিল সে’। ওই ঘটনার পর তিনি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় একটি জিডিও করেন।
তিনি বলেন,‘পুলিশ নিশ্চয় টাকা খেয়েছে না হলে সোহেলকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ বিচার চাই, অন্য কিছু চাই না। জানি না,ভাই হত্যার আদৌ বিচার পাব কিনা।
রিপন জানান, চলতি সপ্তাহে ফোনে রিপন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ‘কেন খুনিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না?’ তদন্ত কর্মকর্তা আলীম হোসেন সিকদার তাকে জানান, ‘খুনিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কেউই খুঁজে পাচ্ছে না। এ করণে তাকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘরোয়ার মালিক সোহেল ঘটনার পর কিছুদিন পলাতক থাকলেও আবারও ফিরে এসেছেন এবং ঘরোয়ার অন্য দুটি শাখা মহাখালী ও সদরঘাট জজ কোর্টের সামনের শাখায় মাঝে মাঝে বসছেন। পাশাপাশি সোহেল তার হোটেলের বন্ধ হয়ে যাওয়া মতিঝিল শাখাটি আবারও খোলার জন্য জোর লবিং করে যাচ্ছেন।
সোহেলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীদের ভাল সম্পর্ক থাকার কারণেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
যে নির্মাণাধীন বাড়ির মেসে রিয়াদকে হত্যা করা হয়েছিল তা সেই বাড়িটিও এখন তালাবদ্ধ। আর গত ৩ নভেম্বর মতিঝিল শাখার ঘরোয়া হোটেলটি বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত।
এই হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী যারা ছিলেন তাদেরকেও আর চাকরিতে রাখেনি মালিক পক্ষ। তাদের দ্রুত চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে অন্য কর্মচারী যারা এখনও আছেন, তারাও ভয়ে মুখ খুলছেন না।
মামলার বিষয়ে কথা হয় তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আলীম হোসেন শিকদারের সঙ্গে। মূল আসামিকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না। বেশি কিছু জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া ও ওয়ারীর ডিসিকে ফোন করেন। ’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে এবং মূল আসামি পলাতক থাকায় এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৭ অক্টোবর রাতে ওয়ারীর স্বামীবাগ এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল মালিক সোহেলের নির্দেশে রিয়াদকে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা হয়। পরে রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করে সোহেল। ওই সময় হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হওয়ার গল্প সাজায় হোটেল মালিক সোহেল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রিপন হোসেন বাদী হয়ে সোহেল,জসীম ও খবিরের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে ঘটনার পর শুধু জসীমকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় পুলিশ। বাকি আসামিরা এখনও পলাতক রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৭ ঘণ্টা,ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
এমআইকে/আরআই