ঢাকা: ঘুমিয়ে থেকে কিংবা আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ম্যানেজড হয়ে অবৈধ ভবন নির্মাণ বা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র আনিসুল হক।
সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের উপস্থিতিতে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন দু’জনেই।
রাজউককে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী।
মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজউকের অনেক গাফিলতি আছে। সে গাফিলতির সুযোগ নিয়ে আবাসিক এলাকাগুলোতে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। চোখের সামনে ১৭-১৮তলার অনুমতি নিয়ে ২৫তলা ভবন তোলা হলেও রাজউক বাধা দেয়নি। তবে ঘুমন্ত রাজউককে জাগানোর চেষ্টা চলছে।
এ সময় পাশে বসা মেয়র আনিসুল হক বলেন, বাধা দেয়নি নয়, রাজউক ম্যানেজড হয়ে যায়।
এর আগে জয়নাল আবেদীনকে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র আনিসুল হক বলেন, কোনো ভবনের রাজউকের অনুমোদন ১৫তলা, সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ২০ তলা। ৪ হাজার বর্গফুটের বিপরীতে নির্মাণ হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুট। এসব কিভাবে হচ্ছে? রাজউকের কি চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা নেই? নাকি তাদেরই যোগসাজশে এসব হচ্ছে?
তিনি বলেন, আমাদের কানে আসে, টাকার বিনিময়ে রাজউকের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। রাজউক ভবন নির্মাণের খবর পেয়ে অনুমোদন দেয়। কিন্তু অনুমোদনের পর কিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে তা খেয়াল রাখে না।
ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, ২০০৭ সালের পর থেকে আবাসিক এলাকায় ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ। কিন্তু এরপরও কেন অনুমোদন মিলেছে? যদি অনুমোদন নাও মেলে তবে কি করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে? এর সব কিছুরই উত্তর জানেন রাউজক কর্তৃপক্ষ।
এসবের উত্তরে রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন দায় স্বীকার করে বলেন, ‘আমি দায় অস্বীকার করছি না। এসব অনিয়মে রাজউকের সহযোগিতা প্রমাণিত। বলতে পারেন আমাদের যোগসাজশও রয়েছে। তবে ঢাকার আবাসিক এলাকায় কি ধরণের বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা যাবে- সে বিষয়ে ২০০৯ সালে একটা পরিপত্র জারি করেছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর কোনোটাই যে মানা হচ্ছে না, তা নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সিও মেজবাহুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সিও খান মো. বেলাল ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই ঢাকা শহর নিয়ে পরিকল্পনাবিদদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল। যখন ধানমণ্ডি সৃষ্টি হয়, তখন ঢাকা এতো বৃদ্ধি পেতে পারে তা কেউ ধারণাও করেননি। ফলে শিল্প এলাকা করা হয় তেজগাঁওয়ে। তারা ভেবেছিলেন, তেজগাঁওয়ে বাইরে শিল্প কারখানা যাবে না। এখন ঢাকা বাড়ছে, আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহর সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
তিনি প্রত্যেক ভবনকে নিজস্ব স্যুয়ারেজ সিস্টেম ও গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রাখার আহবান জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ভবনের নিচে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রাখুন। যারা অনুমতি নিয়েও রাখেননি তাদেরকে বাধ্য করা হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় ভবন ফাঁকা থাকলেও আবাসিক এলাকাগুলোর অ্যাপার্টমেন্টে অফিস করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ খরচ বাঁচানো। বাণিজ্যিক এলাকায় ভবন ভাড়া কিছুটা বেশি।
তিনি ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ভবন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরাতে শিগগিরই মেয়র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশসময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
জেপি/এএসআর
** ‘বেড়ায় অনেক খেত খেয়েছে’