ঢাকা: সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে অনেক খাবারের মধ্যে খেজুর না হলে যেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনই ভরে না। ইফতার আয়োজনের তাই প্রায় আবশ্যিক হয়ে উঠেছে খেজুর।
আমদানি করা লাখ লাখ টন খেজুর এতোদিন পবিত্র, উপাদেয় ও `সুন্নত` মনে করে খেয়ে এলেও বিপত্তি বেঁধেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরীক্ষার পর। জানা গেল আমরা এতোদিন আরব দেশ থেকে যে খেজুর আমদানি করে খেয়ে আসছি তাতে ভয়াবহ পরিমাণে ফরমালিন বা কেমিক্যাল মেশানো হয়। আর এ অপকর্মটি এ দেশের ব্যবসায়ীরা করছেন না, করছেন স্বয়ং ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর নিজ দেশ সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের লোকেরা। যদিও মহানবী (সঃ) সৎ ব্যবসাকে মোমিনের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর সহকারী পরিচালক আবু সাইদ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে আমদানি করা বিভিন্ন ব্রান্ডের খেজুর পরীক্ষা করে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন বা কেমিক্যাল পাওয়া যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘কেবল ফুটপাত বা খোলা বাজারের খেজুরই নয়, সুপার শপের দামি ব্রান্ডের খেজুরও এ তালিকার বাইরে নয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন নামকরা মেগাশপে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এ ধরনের কেমিক্যালযুক্ত খেজুর পাওয়া গেছে। ’
১ আগস্ট চট্টগ্রামে আগোরায় অভিযান চালিয়ে এ ধরনের খেজুর পায় আদালত। ২ আগস্ট খুলনার একটি কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফরমালিনযুক্ত খেজুর জব্দ করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল-আমীন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘খেজুরে ফরমালিন দেওয়ার বিষয়টা আগে জানা যেতো না। কিন্তু এখন বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ’
শ্যামবাজারের ফলব্যবসায়ী এবং আড়তদার জসীম উদ্দিন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলন, ‘খেজুরসহ অন্যান্য ফল আমদানির পর সাধারণত হিমাগারে সংরক্ষণ করি। সেখানে ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজন হয় না। ’
তিনি বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণত তাদের প্রয়োজন মতো খেজুর আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায় এবং প্রায়ই দিনেরটা দিনে বিক্রি করে। ফলে তাদেরও ফরমালিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ’
বাবু বাজারের ফল আমদানিকারক ভাইভাই ব্রাদার্সের হাজি আব্দুস সালাম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত সৌদি আরব, দুবাই, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর ও পাকিস্তান থেকে খেজুর আমদানি করে থাকি। ’
তিনি বলেন, ‘আমদানি করা খেজুর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারের মাধ্যমে বন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তা চলে যায় কোল্ড স্টোরেজে। তাই আমাদের ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজন নেই। ’
ঢাকা নিউ মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘খেজুরে ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজন কি? এটাতো এমনিতেই এক মাস ভালো থাকে। আমরা এক পেটি খেজুর এনে তা ১ দিনেই বিক্রি করে ফেলি। ’
বিএসটিআইয়ের এক পরিচালক এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেট জানান, `এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে, রপ্তানিকারক দেশ থেকেই নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে এ দেশে খেজুর পাঠানো হয়। `
বিএসটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী কোনো খাদ্য দ্রব্য, ফল-মূল, সবজি- নৌ, আকাশ বা স্থলপথে আমদানি করা হলে তা সব ধরণের রাসায়নিক পরীক্ষা করার পরই তা দেশের বাজারে প্রবেশ করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণাকেন্দ্র ও খাদ্য অধিদপ্তরের কাজ। ’
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে তারা প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১১