ঢাকা: রাজধানীর শাহবাগ থেকে কলাবাগান যাবেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। কিন্ত মিটারে যাবে না কোনো সিএনজি চালিত অটোরিকশাই।
মাত্র দু’দিন আগের এ ঘটনা বলছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী । এ নিয়ে তিনি নিজেই আন্দোলনে সোচ্চার। তাদের জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর ৮০ শতাংশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা মিটারে চলে না। আর অনেক অটোরিকশা চালক ‘মিটার টেম্পারিং’ করে ফেলেছেন। কোনো যাত্রীর পক্ষে এটা ধরা সম্ভব নয়।
মহাখালি, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, এসব জায়গায় দাঁড়ানো কোনো অটোরিকশাই মিটারে চলছে না।
ভোরে অথবা সন্ধ্যাবেলায় যাত্রীরা যখন এসব স্টেশনে নামেন, তখন জিম্মি হয়ে পড়েন অটোরিকশা চালকদের হাতে। তখন চালক একেতো মিটারে যাবেনই না উল্টো কয়েকগুন বেশি ভাড়া চেয়ে বসবেন- এমন অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকায় একশ’ থেকে দেড়শ’টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলছে, যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এগুলোর কয়েকটি রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নিয়ে আসা, আবার কয়েকটি প্রাইভেট লেখা, বাকিগুলো চোরাই।
এসব অটোরিকশার কয়েকজন চালক জানান, এগুলোর বেশির ভাগের মালিক পুলিশের সদস্য। তারাই নিরাপদে চালানোর জন্য বেছে নিয়েছেন নতুন বাজার থেকে কাকলীর রুট। এগুলোর ভাড়ার হিসাব মিটারে হয় না।
গুলশান, বনানী ও কাকলীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রী হয়ে দেখা গেছে, পুলিশের মালিকানাধীন ছাড়া যেসব অটোরিকশা চলছে, সেগুলোকে কয়েকজন লাইনম্যানের পকেটে টাকা গুজে দিতে হয়। এ টাকাও আবার এ রুটের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। আর অন্য এলাকার কোনো অটোরিকশা গুলশানে ঢুকে পড়লে কাগজপত্রসহ নানা তল্লাশি চালান তারা।
ঢাকা মহানগর সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্যাহ বুলু জানিয়েছেন, রাজধানীতে অর্ধেক অটোরিকশা মিটার মানছে, আর অর্ধেক মানছে না। যে অর্ধেক মানছে না, সেগুলো রাজধানীর বাইরের জেলা থেকে আসা। পুলিশ এসব অটোরিকশা থেকে চাঁদা নেয়।
মিটার টেম্বারিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নতুন মিটারে টেম্পারিংয়ের সুযোগ নেই। পুরনো মিটার যেসব অটোরিকশায় লাগানো, সেগুলোতে টেম্পারিং করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যাটা বেশি নয়।
সিএনজি মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, রাজধানীর অন্য এলাকার লম্বা সড়কপথেও মিটারবিহীন অটোরিকশাগুলো অহরহ চলছে। মুগদা থেকে মান্ডা ও খিলগাঁওয়ের ভেতরের সড়কগুলোতে স্থানীয় কাউন্সিলরকে টাকা দিয়ে অটোরিকশা চলার অভিযোগও রয়েছে।
মালিক সমিতির আরেকজন নেতা বেশিরভাগ অটোরিকশা মিটারে চলে না স্বীকার করে জানান, একটি নতুন সিএনজি চালিত অটোরিকশার দাম ১১ লাখ। অথচ মাত্র ১ লাখ টাকায় এখন পাওয়া যায়। এগুলো চোরাই অথবা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নিয়ে এসে রঙ পরিবর্তন করে সবুজ রঙ লাগিয়ে চালানো হচ্ছে। এগুলোর কোনোটিরই মিটার ঠিক নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ( ট্রফিক দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগ পেয়ে দিনে অন্তত একহাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এসব অভিযোগের মধ্যে কাগজপত্রবিহীন রয়েছে, আবার মিটার ছাড়া চালানো অটোরিকশাও রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
এসএ/এএসআর