কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) থেকে: মাহমুদা বেগম (২৫)। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসকের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে দেখা যায় মাহমুদাকে।
কেরানীগঞ্জের এ হাসপাতালটিতে ৬ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্সসহ মোট ১৮ জন লোকবল থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে হাসপাতালটিতে কারো দেখা মেলেনি।
কাজেই বাধ্য হয়ে বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটতে হচ্ছে মাহমুদাকে। মাহমুদার মতোই হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা নিতে এসেছেন জিনজিরাবাগ এলাকার মোহাম্মদ হানিফ মিয়ার স্ত্রী হাসিনা বেগম। আব্দুর রহমান নামে চার বছরের শিশুকে নিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে তিনিও ছুটছেন অন্যত্র।
কেরানীগঞ্জ হাসপাতালের প্রধান সহকারী অ্যাডভোকেট আলম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালটিতে ৬ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট, দুইজন অফিস সহকারী, দুইজন ওয়ার্ড বয়, একজন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও একজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান পদে জনবল থাকার কথা। সবগুলো পদে জনবল না থাকলেও চিকিৎসক এবং নার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সবাই আছে।
তবে, নিয়মিত রোগীদের উপস্থিতি না থাকার কারণে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ছাড়া অন্য সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেরানীগঞ্জ ২০ শয্যার হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক রাকিব মাহমুদ মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, পিজি হাসপাতালে ট্রেনিং থাকার কারণে তিনি আজ (৩১ অক্টোবর) হাসপাতালে উপস্থিত নেই। তবে, নিয়মিতভাবেই তিনি হাসপাতালে রোগী দেখেন বলেও দাবি তার।
হাসপাতালটির বেহাল দশা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন মাত্র ৮/১০ জন রোগী আসেন। প্রায় ২ বছর ধরে হাসপাতালে কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই। যে কারণে রোগীরা আর ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন না এবং ভর্তিও হয় না। তাই হাসপাতালটির অন্য চিকিৎসক এবং নার্সরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রশিদ এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত কয়েক বছর ধরে ওই হাসপাতালে সরকারি বরাদ্দ বন্ধ থাকার কারণে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দিচ্ছেন।
কিন্তু এক হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অন্য হাসপাতালে সেবা দেওয়ার বিষয়টি কতোটুকু আইনসঙ্গত জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ওপর মহলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেই ওই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা কারা? এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের ৭ জুলাই ওই সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় নামে মাত্র টিকে আছে ২০ শয্যার হাসপাতালটি। যে কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
পিসি