ঢাকা: সকাল পৌনে সাতটা। শাপলা চত্বর মোড় তখনও জমে ওঠেনি।
এর এক ঘণ্টা পর, আগের দৃশ্যগুলোতে কিছুটা কিছুটা পরিবর্ত এলো, কিছুটা ব্যস্ততাও লক্ষ্য করা গেল। তখনও অবশ্য মতিঝিল ‘মতিঝিলে’ পরিণত হয়নি। চেনা যানজট তখনও অনুপস্থিত। বাসে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও যাত্রী ডেকে যাচ্ছেন হেলপাররা। রাস্তার যেখানে সেখানে বাঁকা করে গাড়িগুলোকে দাঁড় করাচ্ছেন চালকরা। রিকশা বেড়েছে বাসের চেয়ে কয়েকগুণ। ফুটপাতে পথচারীও। ইতিমধ্যে সংবাদপত্র বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসে গেছেন ফুটপাতে। যদিও তার আশেরপাশের খাটিয়াগুলো তখনও খাঁখাঁ করছে।
পুলিশ বক্সে হঠাৎ ব্যস্ততা। সার্জেন্টের উপস্থিতি টের পেয়ে বক্স থেকে বেরিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন মোড়ে ছড়িয়ে পড়লেন। তবে গাড়ির চাপ বেশি না থাকায় ফুটপাতে বসে কাউকে পত্রিকায় চোখ বুলাতে, কাউকে আবার চা খেতে দেখা গেল। বলে নেওয়া ভালো, এ এলাকার চা ওয়ালাদের ব্যস্ততা কিন্তু সেই ভোর থেকেই শুরু হয়।
সকাল সোয়া ন’টা। গাড়িগুলোর হর্ন বেড়ে চলেছে। প্রাইভেট কারও বাড়ছে। লাঞ্চ প্যাকেটম টিফিন ক্যারিয়ার হাতে অফিসগামীরা এগিয়ে যাচ্ছেন যে যার গন্তব্যে। ফুটপাতের ফাঁকা চৌকিগুলোতে বসতে শুরু করেছেন হকাররা। কিছুক্ষণ আগেও যে বাসগুলো যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল, এবার যাত্রীদেরকেই তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে!
সকাল সাড়ে ন’টা। এরপরেই শুরু চেনা মতিঝিল! ক্রমেই শাপলা চত্বরকে ঘিরে বেড়ে চলেঠে জটলা। ট্রাফিক পুলিশরা জানালেন, সাধারণ মানুষের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা, গাড়িগুলোর ইউটার্ন নেওয়া, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করা এবং সর্বোপরি অসংখ্য রিকশা চলাচল মতিঝিলের যানজটের জন্য দায়ী।
তাদের কথা সত্যতাও মিলল সঙ্গে সঙ্গে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুট ওভারব্রিজটি দণ্ডায়মান থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন পথচারী নিজ দায়িত্বে গাড়িকে থামার সঙ্কেত দিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলেন। বাধ্য হয়েই থেমে যেতে হলো গাড়িগুলোকে। যা তাদের গতিকে কিছুটা শ্লথ করে দিলো।
মতিঝিল মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ আইন মানে না। বিপদজনক জেনেও একটু কষ্ট করে ওভারব্রিজে ওঠে না। গাড়ি সামলানো গেলেও এসব মানুষকে সামলানো যায় না।
রাস্তার গাড়িগুলোর শ্লথ গতির আরেকটি অন্যতম কারণ হলো রিকশা। পায়ে চালিত এই যানবাহনটি গাড়িগুলোর সামনে চলে এলে বাধ্য হয়ে গতি কমিয়ে আনতে হয়। ফলে পিছনের গাড়িগুলোও তখন গতিহীন হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক সার্জেন্ট এসএম শওকত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মতিঝিলের আশেপাশে অনেক বেশি সংযোগ সড়ক। এসব রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার রিকশা ঢোকে। আর রিকশা যখন গাড়ির সামনে পড়ে, তখন গাড়ির গতিও রিকশার গতিতে নামিয়ে আনতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে যানজট বেড়ে যায়।
তার মতে, ইত্তেফাক মোড়, কমলাপুর ও খিলগাঁও রেলগেটে থেকেই মতিঝিলের দিকে রিকশা চলাচলা বন্ধ করলে এ এলাকার যানজট কিছুটা কমতে পারে।
একাধিক পুলিশ সদস্য সাধারণ মানুষকেই যানজটের জন্য দায়ী করেন। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য সাধারণ যাত্রীরাই বেশি দায়ী। নির্দিষ্ট স্থানে না নেমে তারাই চালকদের যত্রতত্র নামাতে বাধ্য করেন। অনেক সময় বাহাস কিংবা মারধরের ভয়ে চালকরা যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত স্থানেই নামান। অথচ ১০ গজ পরে নেমে হেঁটে গেলেই এই অনিয়ম থেকে যাত্রী ও চালক উভয়েই বেঁচে যেতেন।
গত ২৫ বছর ধরে মতিঝিলে চা বিক্রি করা দুলাল অবশ্য এ এলাকার জনদুর্ভোগের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির চাপকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি একটি গাড়ি নিয়ে অফিসে আসেন। অথচ এ এলাকার বেশিরভাগ অফিসে পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে বিভিন্ন রাস্তা দখল করে রাখে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো। একটা গাড়ি রাস্তার অন্তত ১০-১২ ফুট জায়গা দখল করে রাখে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ/