ঢাকা: রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টা। কালো রংয়ের (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৭-১৩৮৮) একটি গাড়িকে প্রথমে রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করালেন মাসুম ও রফিক নামে দুই ট্রাফিক সার্জেন্ট।
পাঁচ মিনিট পেড়িয়ে গেলো। কথাবার্তা চলছে গাড়িটির চালক এবং তাদের মধ্যে। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই পিছনে প্রায় ৫০টির বেশি গাড়ির জটলা লেগে গেলো।
এদিকে যখন গাড়িটিকে একপাশে দাঁড় করিয়ে কাগজ দেখায় ব্যস্ত সার্জেন্টগণ, অন্যদিকে রাস্তার মাঝখানে চলমান গাড়ি ধরতে ব্যস্ত ট্রাফিক কনস্টেবল হায়দার আলী।
কালো কালারের গাড়িটিকে মামলা ধরিয়ে দিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুম। আবার চলতে শুরু করলো গাড়ির চাকা।
মামলার বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় গাড়ির চালক রাসেল হোসেনের।
রাসেলের ভাষ্য, গাড়ির কাগজপত্রের কোনো সমস্যা নাই। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ডিজিটাল। কিন্তু সার্জেন্ট ১২শ টাকার মামলার সিলিপ ধরিয়ে দিয়েছেন তাকে।
রাসেল আক্ষেপ করে বলেন, এই হয়রানির কোনো মানে হয় না। আর আপনারাও (সাংবাদিক) বা কি করবেন? শুধু দেখবেন কিন্তু কিছুই করতে পারবেন না।
বেলা ১১ টা। যাত্রী নিয়ে ছুটছে মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বিকল্প (ঢাকা মেট্রো জ-১১-২৬৩১)পরিবহন নামে অপর একটি গাড়ি। আগেরবারের মতো এবারো গাড়িটিকে রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে মামলা দিতে ব্যস্ত সার্জেন্ট মাসুম। আবারো কিছুক্ষণের জন্য সড়কে অন্যান্য গাড়িগুলোর ধীর গতি।
বিকল্প পরিবহনের চালক আকবর আলীর অভিযোগ, যতই কাগজপত্র ঠিক থাকুক মামলা করবেই ট্রাফিক পুলিশ।
এর কিছুক্ষণ পর হিমাচল পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ১৪-৮২৫৭) একটি গাড়িকে দাঁড় করালেন কনস্টেবল হায়দার আলী। অতঃপর ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিক গাড়ির চালক হাসানকে গাড়ির কাগজ দেখাতে বললেন। তিনি গাড়ির সব কাগজ ও নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখালেন। কিন্তু বাঁধ সাধলেন সার্জেন্ট রফিক। হাতে ধরিয়ে দিলেন ২০০শ টাকার সমামলা।
হিমাচল পরিবহনের চালক হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজ দেখালাম। নিজের ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখালাম। কিন্তু সার্জেন্ট মামলা দিয়ে দিলেন। কারণ ১০০টাকা দিই নাই। দিলে মামলাটা খাইতাম না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে গরীবের পেটে পুলিশ শুধু লাথি-ই মেরে যাবে। আর আমরা লাথি খেয়েই যাব।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকাল ৯থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে এসব চিত্রের দেখা মেলে।
বাংলামোটর মোড়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানকালে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কোনো কারণ ছাড়াই মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন হয়রানি করে চালকদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রাস্তার মাঝখানে বিভিন্ন গাড়ি দাঁড় করিয়ে ট্রাফিক পুলিশ তাদের কাজ করছেন। এর ফলে বাংলামোটর মোড় থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মামলার বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন ধারায় আমরা মামলা দিয়ে থাকি। যেমন ট্রাফিক আদেশ অমান্য করলে ১৪০ ধারায় ৪০০ টাকা। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ১৪০/১৩৭ ধারায় ৪০০ টাকাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দেয়া হয়।
এসময় বিকল্প পরিবহনকে কি অপরাধে মামলা দেওয়া হলো এরই উত্তরে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, এখন সময় নাই পরে আসেন।
সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিক মিয়াও বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
এসজে/আরএইচএস